Bangladesh: চিন-তুরস্কের অস্ত্রের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা, যুদ্ধে পাকিস্তানের চেয়েও ল্যাজেগোবরে হবে বাংলাদেশের দশা

মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেই লড়াইতেই বাংলাদেশের সেনার হাড় জিরজিরে অবস্থাটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দেশটার শক্তি বলতে উপকূল পাহারা দেওয়ার সক্ষমতা। ছোট ছোট বন্দুক ছাড়া দেশে আর কিছুই উৎপাদন হয় না। পুরোটাই চিন ও তুরস্কের উপর নির্ভরশীল।

Bangladesh: চিন-তুরস্কের অস্ত্রের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা, যুদ্ধে পাকিস্তানের চেয়েও ল্যাজেগোবরে হবে বাংলাদেশের দশা

| Edited By: সোমনাথ মিত্র

May 25, 2025 | 2:03 PM

চূড়ান্ত অস্থিরতা পদ্মাপাড়ে। সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ব্যাপক কোন্দল সেনার। যে কোনও মুহূর্তে অন্তর্বর্তী মুহম্মদ ইউনুসের সরকার পড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেনার ট্যাঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে সে দেশের সেনার ভাঁড়ারে কী কী অস্ত্র মজুত রয়েছে বা বাংলাদেশের সেনার সামরিক ক্ষমতা কতখানি, জেনে রাখা দরকার।

গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী,বাংলাদেশের স্থান এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তানেরও পরে, বিশ্বের মধ্যে ৩৫ নম্বরে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি চিনা অস্ত্র পাকিস্তান কেনে, দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকার মোট সামরিক ক্ষমতার দুই তৃতীয়াংশই চিনের কাছ থেকে হয় ধারে কেনা, নয়তো আমদানি করা। আর চিনা অস্ত্রের যে কী হাল হতে পারে, সেটা সাম্প্রতিককালে ভারতের সশস্ত্র সেনার ‘অপারেশন সিঁদুর’ দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের চেয়েও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আরও সমীচীন। যে কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাই বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে। মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইতেই বাংলাদেশের সেনার হাড় জিরজিরে অবস্থা বেরিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশের প্যারা কমান্ডো

প্রথমত, অস্ত্রশস্ত্রের জন্য ‘আমর্ড ফোর্স অফ বাংলাদেশ’ বা এএফবি-র সম্পূর্ণ নির্ভরতা চিনের উপরে, দ্বিতীয়ত, ঢাকার সেনার তেমন কোনও উন্নতি গত কয়েক দশকে হয়নি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ সেনার শিরদাঁড়া ‘মিং ক্লাস সাবমেরিন’ বা ‘এমবিটি-২০০০ ট্যাঙ্ক’- পুরোপুরি চিনা প্রযুক্তির। এছাড়া রয়েছে কিছু তুরস্ক, ব্রিটেন ও রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা অস্ত্র। তুরস্কের কাছ থেকে ড্রোন কেনে বাংলাদেশ। ১৯৮০-তে চিনা লালফৌজের কাছ থেকে টাইপ-৫৯ ট্যাঙ্ক পায় ঢাকা। আজ পর্যন্ত ওই ট্যাঙ্কই ঢাকার ফৌজের মেরুদণ্ড। শেখ হাসিনার আমলে কিছু ‘ভিটি-৫ লাইট ট্যাঙ্ক’, সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি গান, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল চিনের কাছ থেকে কিনলেও বছরের পর বছর ধরে সেগুলোর কোনও আপগ্রেডেশন হয়নি। এমনকী পরীক্ষা করেও দেখা হয়নি সেগুলি আজও চলে কি না। ভুলে গেলে চলবে না বাংলাদেশের জন্মের পর তাদের প্রথম আর্টিলারি ইউনিটের ৬টি কামানের মধ্যে দুটি উপহার দেয় দিল্লি

 

তুরস্কের কাছ থেকে পাওয়া রকেট লঞ্চার

 

 

বাংলাদেশে তেমন কোনও বড় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থাও নেই। যার ফলে অস্ত্র উতপাদন ক্ষমতাও সীমিত। ছোট বন্দুক, বিস্ফোরক ও গুটিকয়েক সাঁজোয়া গাড়ি তৈরি ছাড়া অন্য কিছুই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। তার মধ্যেও যেটুকু বাংলাদেশে তৈরি হয়, সেখানেও চিনা প্রযুক্তি বা ট্রান্সফার অফ টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে কোনও যুদ্ধবিমান, কামান বা ট্যাঙ্ক তৈরি হয় না। নিজস্ব প্রযুক্তিতে নজরকাড়া উৎপাদন বলতে ঢাকার নৌসেনার জন্য ‘পেট্রোলিং ভেসেল’। এগুলির সীমিত গুলি চালানোর ক্ষমতা রয়েছে। যুদ্ধে এগুলি কোনও কাজে লাগবে না। ঢাকার মতোই পড়শি মায়ানমারের সঙ্গেও বেজিংয়ের সম্পর্ক বেশ ভাল। যে কারণে তাদের হারানোর ক্ষমতাও নেই বাংলাদেশের নেই। দুই দেশই অস্ত্রের জন্য চিনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দখল প্রায় নিয়ে ফেলেছিল মায়ানমারের বিদ্রোহীরা। মূল ভূখণ্ড থেকে জাহাজ পাঠিয়ে পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায় নৌসেনার।

মায়ানমারের বিদ্রোহীরা আকাশপথেও বাংলাদেশকে নাজেহাল করে ছেড়েছে। বাংলাদেশ এয়ারফোর্স বা BAF নির্ভরশীল ১৯৯৯-তে রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা মিগ-২৯-এর উপরে। পাশাপাশি আজকের দিনে প্রায় অকেজো চিনা এফ-৭বিজিআই বাংলাদেশের আকাশপথে টহল দেয়। তুলনায় পড়শি মায়ানমারের সেনা বছরখানেক আগে রাশিয়ার কাছ থেকে সুখোই ৩০ কিনে রেখেছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে আধুনিক বলতে বাংলাদেশের কাছে রয়েছে তুরস্কের পাঠানো ড্রোন, মিসাইল। প্রয়োজনের সময় সেগুলির কী অবস্থা হতে পারে সে তো সকলেরই জানা। আর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে ১৯৯৯-তে তৈরি বিএনএস বঙ্গবন্ধু। ভারতের কাছ থেকেও কয়েক ব্যাচ ড্রোন পেয়েছে ঢাকা, তবে সেটা শেখ হাসিনার আমলে। ইউনুস জমানায় পাওয়া তো দূরের কথা, খানিক শিক্ষা দিতে ঢাকার সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তিও বাতিল করতে হয়েছে ভারতকে। মনে রাখতে হবে ইতিমধ্যে ভারতের আকাশসীমায় কয়েকটি ড্রোন দেখতে পাওয়া গেছে যেগুলি বাংলাদেশ থেকে এসেছে বলেই অনুমান।

ঢাকার সেনার এমন অবস্থা, যে টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্য জরুরি গোলাগুলিও নেই তাঁদের ভাঁড়ারে। যুদ্ধ হলে কয়েক দিন টেকার ক্ষমতা নেই সেনার। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বলতে ঢাকার ভরসা ‘ম্যানপ্যাড’। মানে, সেনা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে সক্ষম এমন ডিফেন্স সিস্টেম। অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বলতে জিডিএফ-০০৯ সিরিজ, তাও চিনের তৈরি। ফোর্স গোল ২০৩০-এর মধ্যে নিজের সেনা ও অস্ত্রের আধুনিকীকরণ করতে উদ্যোগী হয়েছে ঢাকা, সেটাও শেখ হাসিনার উদ্যোগেই। বাংলাদেশের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের সদস্যরা রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিসেনার অধীনে নামিবিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডায় শান্তিরক্ষায় মোতায়েন রয়েছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের মোট সেনা বাহিনী সংখ্যা ২ লাখের কাছাকাছি।