কাবুল: অবশেষে সচল হল কাবুল বিমানবন্দর। বৃহস্পতিবারই প্রায় ২০০ বিদেশীকে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে প্রথম বাণিজ্যিক বিমান উড়ল। ৩১ অগস্ট মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এই প্রথম বাণিজ্যিক বিমান চলাচল উড়ান নিল। আগামিদিনে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আরও বিমান চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৫ অগস্ট কাবুল দখলের পরই ব্য়স্ত হয়ে পড়েছিল কাবুলের হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মী, রাষ্ট্রদূত ও দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন দেশে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় আফগান নাগরিকদেরও। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এবং তালিবানি হুঁশিয়ারি মুখে পড়ে তড়িঘড়ি উদ্ধারকাজ শেষ করতে হয়। ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত আফগান নাগরিকদের।
উদ্ধারকার্য শেষ করার শেষদিনও ধার্য করে দিয়েছিল তালিবানরা। গত ৩১ অগস্টই আফগানিস্তানের মাটি ছাড়ে শেষ মার্কিন বিমান। তবে আফগানিস্তানেই আটকে পড়েন বহু ব্রিটিশ ও মার্কিন নাগরিক। চলতি সপ্তাহেই চার্টার্ড বিমানে কয়েকশো মার্কিন ও আফগান নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা ঘিরে তালিবানদের সঙ্গে বিরোধ বাধে। বাধ্য হয়ে আফগান নাগরিকদের রেখেই ফিরে যায় বিমানটি।
এ দিকে, আফগানিস্তান ছাড়ার আগে নিজেদের যাবতীয়সামরিক বিমান অকেজো করে দেওয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থাও নষ্ট করে দেয় মার্কিন বাহিনী। তালিবানের অভি্যোগ, বিমানবন্দরের ভিতরেও ভাঙচুর চালিয়েছে মার্কিন সেনা। অবশেষে গত সপ্তাহে কাতার থেকে টেকনিক্যাল এক্সপার্টরা এসে বিমানবন্দর মেরামতি ও তালিবানিদের বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। তালিব বাহিনীর তরফে জানানো হয়, শীঘ্রই ফের সচল হবে কাবুল বিমানবন্দর।
অবশেষে বৃহস্পতিবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান কাবুল বিমানলন্দর থেকে দোহায় উঠে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন আধিকারিক জানান, তালিবানের বিদেশমন্ত্রী ও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী উড়ান পরিষেবা সচল করতে সাহায্য করেছেন। আমেরিকান, জার্মান, হাঙ্গেরিয়ান ও কানাডিয়ান নাগরিকরাও ওই বিমানে আফগানিস্তান থেকে ফিরেছেন। কাতারের রাষ্ট্রদূত মুতলাক বিন মাজেদ আল-কাহতানি জানান, ২০০ যাত্রীদের নিয়ে শুক্রবারও একটি বিমান আসবে।
আমেরিকার স্টেট ডিপার্মেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, “১০ জন মার্কিন নাগরিক ও ১১ জন ব্যক্তি যাদের কাছে গ্রিন কার্ড রয়েছে, তারা বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের ওই বিমানে ফিরেছেন। মাজার-ই-শরিফ সহ একাধিক স্থানে আরও কিছু মার্কিন নাগরিক আটকে রয়েছেন, তাদেরও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এ দিকে, বহু আফগান নাগরিক এখনও দেশ ছাড়তে চাইছেন তালিবানের ভয়ে। তবে তালিবানের বিবৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হওয়ায় এখনই আফগান নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাচ্ছে না কোনও দেশ। কারণ একদিকে যেমন তালিব মুখপাত্র জানিয়েছেন, যদি কোনও আফগান নাগরিক দেশ ছাড়তে চান, তবে তাদের যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু শীর্ষ নেতা আখুন্দজাদা জানিয়েছেন, আফগান নাগরিকরা যেন দেশ ছেড়ে না যান। যারা অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরও দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈধ কাগজ না থাকায় আফগান নাগরিকদের উদ্ধার করা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
বিশেষ উল্লেখ্য, ক্ষমতা দখলের পর কাবুল বিমানবন্দরের নামও বদলে দিয়েছে তালিবান। হামিদ কারজ়াই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম রাখা হয়েছে কাবুল বিমানবন্দর, সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্রাক্তন আফগান প্রধানমন্ত্রীর নাম।
আরও পড়ুন: ‘মহিলারা মন্ত্রী হতে পারেন না, বাচ্চা জন্ম দেওয়াই তাদের কাজ’, অকপট তালিব মুখপাত্র