ঢাকা: ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে ৫ অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল আদালত। এ ছাড়াও এক অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন হাজতবাসের রায় শুনিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্যাইব্যুনাল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান। ৬ সাজাপ্রাপ্তকেই আল কায়দা জঙ্গি সংগঠনের শাখা আনসার উল্লাহ বাংলার সদস্য বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম সরবার খান।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্ত্রী রফিদা আহমেদের সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফেরার পথে কুপিয়ে খুন করা হয় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। সে সময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীদের আঘাতে গুরুতর আহত হন রফিদা। নষ্ট হয়ে যায় তাঁর একটি আঙুলও। অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় এই ঘটনায় মামলা দায়ের করেন শাহবাগ থানায়।
বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, ইসলামিক মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্যই আনসার উল্লাহ বাংলার জঙ্গিদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল অভিজিৎ রায়কে। এরপর ব্লগারের নারকীয় হত্যার প্রতিবাদে সরব হয় দুই বাংলা। অবশেষে শাস্তি পেল হামলাকারীরা। এ দিন সকাল ১০ টার সময় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় আসামিদের। এরপর দুপুর পৌনে ১২টায় কাঠগড়ায় তোলা হয় তাদের। সেখানে গোলাম সরবার খান বিচারপতির কাছে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি তোলেন।
সেই প্রেক্ষিতেই আনসার আল ইসলামের বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হক, জঙ্গিনেতা আকরাম হোসেন, আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হুসাইন, আরফাত রহমাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে ট্রাইব্যুনাল আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান হয়েছে শাফিউর রহমান ফারাবী নামে আরেক অভিযুক্তকে।
জঙ্গি নেতা আরাফাত রহমানের বয়ান অনুযায়ী, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বেরিয়ে আসছিলেন অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী। বইমেলা থেকে অভিজিৎকে বেরিয়ে আসতে দেখে মেজর জিয়া তাকে টিএসএসির মোড়ের দিকে যেতে বলে। সেখানে গিয়ে আরাফত রহমান দেখে, তাদের সহযোগী আলি ও আনিক অভিজিৎকে কোপাচ্ছে। তখন অভিজিতের স্ত্রী চিৎকার করলে আনিক তাঁকেও কুপিয়ে আঘাত করে। যার ফলে একটি আঙুল নষ্ট হয়ে যায় রফিদার। তারপর ঘটনাস্থলে লোকজন জড় হলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা।
তবে অভিজিৎ রায় হত্যাই প্রথম কিংবা শেষ ঘটনা নয়। ইসলাম মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালিখির ফলে রোষের মুখে পড়তে হয়েছে আরও অনেককেই। অভিজিৎ হত্যার আগে ২০০৪ সালে একই ভাবে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ইসলামিক জঙ্গিদের টার্গেট হতে হয়েছিল আরেক লেখক হুমায়ুন আজাদকে। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্পবিজ্ঞানের লেখক জাফর ইকবালকেও হত্যার চেষ্টা হয়েছিল একই কারণে। মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার জন্য আক্রমণের শিকার হওয়ায়, সরব হয়েছিলেন সচেতন মহলের একাংশ। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে এ পারের কবি শ্রীজাত লিখেছিলেন ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ।’