কাবুল: রাজধানী তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার খবর পেতেই পাততারি গুটিয়ে পালিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি। প্রথমে শোনা গিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন ঘানি, পরে জানা যায়, “মানবিকতার খাতিরে” তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। এক সপ্তাহ পার হতেই শোনা গেল, নিজের দেশেই নাকি ফিরতে চাইছেন ঘানি, এমনটাই জানিয়েছেন আসরাফ ঘানির ভাই হাসমত ঘানি।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের দাবি, শীঘ্রই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে চলেছে তালিবান। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানিকেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, তাই তিনি আফগানিস্তানে ফিরে আসতে পারেন। ঘানির ভাইও জানিয়েছেন, এভাবে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে চান না আসরাফ ঘানি। তিনি দেশে ফিরে আসতে চান। কিন্তু হঠাৎ মন বদল কেন হল?
২০১৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন আসরাফ ঘানি। কিন্তু গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আসরাফ ঘানি। শোনা যায়, তিনি নাকি একটি হেলিকপ্টার বোঝাই টাকা ও দামি গাড়ি নিয়ে পরিবার সহ আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন দেশে ঘুরে শেষমেশ তাঁকে ঠাঁই দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। দেশবাসীকে বিপদের মুখে ফেলে এভাবে প্রেসিডেন্টের দেশ ছেড়ে পালানো ঘিরে মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন- সকলেই সমালোচনা করেন।
কিন্তু মুখ বুঝে থাকেননি ঘানিও। কয়েকদিন বাদেই একটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করে প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, “চপার বোঝাই টাকা নিয়ে আসা তো দূরের কথা, পায়ের চটিটা ছেড়ে বুট জুতো পড়ার সুযোগটুকুও পাইনি।” দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যদি ওখানে থাকতাম, তবে আফগানিস্তানের মানুষের চোখের সামনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হত একজন প্রেসিডেন্টকে।” রক্তপাত এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন তিনি, এমনটাই বারংবার দাবি করেছেন তিনি।
অন্যদিকে,সম্প্রতিই একটি সাক্ষাৎকারে খালিল উর রহমান হাক্কানি বলেন, “আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আসরাফ ঘানি, আমরুল্লাহ সালেহ ও হামিদুল্লাহ মোহিবকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ওনাদের আর কোনও শত্রুতা নেই। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে যারা আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাদের সকলকেই আমাদের তরফ থেকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।” তালিবানের তরফেও জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে, আসরাফ ঘানি ও আমিরুল্লাহ সালেহ ফের কাবুলে ফেরত চলে আসতে পারেন।
সূত্রের খবর, শীঘ্রই একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে চাইছে তালিবান। আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারে দেশের সমস্ত বর্ণের মানুষদেরই জায়গা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান। দীর্ঘ এত বছর ধরে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপভোগ করেননি কেউই। তালিবানিদের পরিকল্পনা, দেশের সমস্ত মানুষকে একজোটে শাসন করতে বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এদের মধ্যে পস্তুন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রদেশের ছোট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও থাকবেন। একইসঙ্গে তালিবানদের দাবি, আমেরিকার তরফে বারংবার চাপ দেওয়া হচ্ছে পুরনো সরকার থেকেও কিছুজনকে নতুন সরকারে জায়গা দিতে। এদের মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াই, আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিলের প্রাক্তন প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ রয়েছেন।