প্যারিস: বছর ছয় আগে থেকেই তিনি পরিচিত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মহিলা হিসেবে। ২০২৩-এর শেষে এসে, বিশ্বের ধনীতম মহিলা ফাঁসোয়া বেতেনকোর মায়ার্সের মুকুটে আরও এক পালক জুড়ল। এই বছর আরও ফুলে-ফেঁপে উঠল তাঁর সম্পদ। যার জেরে ১০০ বিলিয়ন, অর্থাৎ, ১ লক্ষ কোটি ডলারের বেশি সম্পদের অধিকারী হলেন তিনি। যাকে বলে ‘সেন্টিবিলিওনিয়ার’। আর এই বিষয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা। কে এই ফাঁসোয়া? জনপ্রিয় বিউটি ব্র্যান্ড, ‘ল’রিয়েল’-এর বর্তমান মালিক। যাদের ব্যবসা যত দিন যাচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে।
গত বৃহস্পতিবার ‘ব্লুমবার্গ’ এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, চলতি বছরে ফাঁসোয়ার সম্পদ বেড়েছে ২৮.৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ, ২৮৬০ কোটি ডলার। আর এভাবেই বছর শেষে তিনি ঢুকে পড়লেন সেন্টিবিলিওনিয়ারদের ক্লাবে। এই ক্লাবের তিনিই প্রথম এবং একমাত্র মহিলা সদস্য। অবশ্যই এটা ফ্রান্সের ফ্যাশন এবং প্রসাধনী শিল্পের জন্য আরও এক মাইলফলক। বর্তমানে বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকায় তিনি আছেন বারো নম্বরে। সামনে আছেন মেক্সিকান ব্যবসায়ী তথা লগ্নিকারী কার্লোস স্লিম। আর এক কদম পিছনে, আমাদের মুকেশ অম্বানি।
তবে, এত ফাঁসোয়া বরাবরই লো প্রোফাইলে থাকেন। বাজি রেখে বলতে পারি, ল’রিয়েল ব্র্যান্ডের নাম আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু, ৭০ বছর বয়সী বিশ্বের ধনীতম মহিলা, ফাঁসোয়ার নাম? অবশ্যই এর আগে শোনেননি। তাঁর জীবনি লিখেছেন টম স্যাঙ্কটন। নাম ‘দ্য বেতেনকোর অ্যাফেয়ার’। তিনি ফাঁসোয়ার সম্পর্কে বলেছেন, “রেশম পোকা কোকুনের মধ্যে থাকে, তিনিও তেমন নিজের পরিবারের পরিধির মধ্যেই গুটিয়ে থাকেন। বাইরে বিশেষ আসেন না।” এই জায়গায় বলে রাখি, ল’রিয়েলের মতো বিশাল ব্র্যান্ডের নেতৃত্ব দেওয়া কিন্তু তাঁর অনে কাজের মধ্যে একটি। এর পাশাপাশি তিনি একজন প্রথম সারির পিয়ানোবাদক এবং অত্যন্ত সম্মানীয় লেখকও বটে। গ্রীক পুরাণ এবং ইহুদি-খ্রিস্টান সম্পর্কের উপর তাঁর লেখা সমালোচন মহলে অত্যন্ত কদর পেয়েছে।
তবে ল’রিয়েল-এর ব্যবসা কিন্তু ফাঁসোয়ার শুরু করা নয়। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে এর মালিক হয়েছেন। বিশ্বের বৃহত্তম এই প্রসাধনী সংস্থাটির শুরু করেছিলেন ফাঁসোয়ার দাদু ইউজিন শুলার। তিনি এক নয়া হেয়ার ডাই ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিলেন। মূলত সেই ফর্মুলা অনুযায়ী পণ্য তৈরি এবং তাকে বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়েই তিনি এই সংস্থার সূচনা করেছিলেন। কালক্রমে সেই সংস্থাই বিশ্বের এক নম্বর প্রসাধনী সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
ইউজিনের পর তাঁর ব্যবসার উত্তারাধিকারী হয়েছিলেন ফাঁসায়োরা তার মা লিলিয়ান। ২০১৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তার আগে পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিশ্বের সবথেকে ধনী মহিলা। তবে, লিলিয়ানের থেকে ফাঁসোয়া ল’রিয়েলের ব্যবসার উত্তরাধিকার পাওয়ার আগে, মা-মেয়ে জড়িয়ে পড়েছিল আইনি লড়াইয়ে। ফাঁসোয়া আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর মায়ের মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে জনৈক ফটোগ্রাফার তথা সোশ্যালাইট। লিলিয়ান প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন. তাঁর মেয়ে তাঁর ব্যবসার উত্তরাধিকার নেওয়ার জন্য এই কথা বলছে। তবে, ২০১১ সালে এক ফরাসি আদালত রায় দেয়, লিলিয়ান ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন। তাই আদালত, তাঁর সম্পদ এবং আয়ের উপর ফাঁসোয়ার নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন দেয়। বর্তমানে ফাঁসোয়া এবং তাঁর পরিবার ল’রিয়েলের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার, প্রায় ৩৫ শতাংশের মালিক। আর বছরের পর বছর ধরে এই ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেলিন ডিওন, বিয়ন্সে, কেন্ডিল জেনার, পেনেলোপ ক্রুজ, আমাদের ঐশ্বর্য রাই প্রমুখ এই সেলিব্রিটি এবং সুপারমডেলরা।