
আসন্ন ১৫ অগস্ট আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্টের মহাগুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে ঠিক হবে, রাশিয়ার মানচিত্রের মধ্যে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা ঢুকে পড়বে কি না, ইউক্রেনে একটানা হামলা মস্কো থামাবে কি না। কিন্তু ওই বৈঠকের মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে খোদ মস্কোয় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতরে বড়সড় নাশকতার ছক বানচাল করল রুশ ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বা এফএসবি। গ্রেফতার করা হয়েছে হামলাকারীকে।
রুশ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মস্কোর এক শীর্ষ কর্তাকে হত্যার ছক কষেছিল হামলাকারী। কিন্তু কে ওই শীর্ষ কর্তা , স্পষ্ট করেননি গোয়েন্দারা। তাঁর নাম পরিচয় প্রকাশ্যে আনেননি গোয়েন্দারা। আর এতেই জল্পনা ছড়িয়েছে, তবে কি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে খোদ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মারার ছক কষা হয়েছিল? আলাস্কার বৈঠকে ডাক পাননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। জেলেনস্কি-কে ছাড়া কীভাবে ইউক্রেনের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই ডামাডোলের মধ্যেই খোদ মস্কো-য় একজন হামলাকারীর ধরা পড়াকে হালকাভাবে নিতে নারাজ রুশ ফেডারেল সিউকিউরিটি সার্ভিস। বিশেষত, হামলাকারী যখন ইউক্রেনের স্পেশ্যাল ফোর্সের সদস্য। ধৃতের কাছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে। বয়স ৩৫-এর আশপাশে। কোড নেম – র্যাভেন। কাজ হাসিল করতে পারলে ইউক্রেনে ফিরে গিয়ে সে দেশের সেনায় যোগ দিতে হবে না, যুদ্ধে যেতে হবে না, এই লোভ দেখিয়ে নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ।
এফএসবি জানিয়েছে, ধৃত স্পেশ্যাল এজেন্ট বোমা বিস্ফোরণে বিশেষজ্ঞ। মস্কোর সরকারি আধিকারিকদের দফতরের পার্কিং লটে গাড়ির মধ্যে ৬০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, ওই পার্কিং লট থেকে একটাও গাড়ি বেরোলে তীব্র বিস্ফোরণে আস্ত দফতরটাই উড়িয়ে দেওয়ার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ইউক্রেনের ওই স্পেশ্যাল এজেন্টকে তৃতীয় এক দেশে নিয়োগ করা হয়। তার কাছে হ্যান্ডলার মারফত নির্দেশ আসত টেলিগ্রামে। মেসেজ পেয়ে রুশ শীর্ষ সেনাকর্তাকে বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়ার ছক কষেছিল র্যাভেন। কিন্তু রুশ গোয়েন্দাদের তৎপরতায় ওই ছক ভেস্তে যায়। এম-৪ হাইওয়ে থেকে র্যাভেন-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসএফবি ডিরেক্টরেটের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, ইউক্রেনীয় গুপ্তচর সংস্থার মাধ্যমেই তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। আপাতত ধৃতকে হেপাজতে নিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, অনুপ্রবেশ ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু হয়েছে। সূত্রের খবর, এই সব অপরাধে রাশিয়াতে ধৃত কেউ আর কোনওদিন বাইরে আলো দেখতে পায় না।
এমনিতেই আসন্ন আলাস্কার বৈঠকে জেলেনস্কিকে দৃশ্যত অগ্রাহ্য করার থেকেই ইউক্রেন হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়ার উপরে। রুশ বিদেশমন্ত্রকের প্রতিনিধি রডিওন মিরোশনিক জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন সেনা হামলা দ্বিগুণ করেছে একাধিক রুশ প্রদেশে। বিশেষত, বেলগরদ, কুর্স্ক খেরসনে সাধারণ রুশ নাগরিকদের উপরে তীব্র হামলা চালিয়ে অন্তত ২২ জনকে হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে আহত করেছে ইউক্রেন সেনা, অভিযোগ রুশ বিদেশমন্ত্রকের। নিহতদের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। পাল্টা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট লোককে বোকা বানাতে ওস্তাদ। ট্রাম্প যেন পুতিনের ফাঁদে পা না দেন।’