ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইতিমধ্যেই ৮ দিন অতিক্রান্ত। রুশ আগ্রসনের ফলে ইউক্রেনের জুড়ে শুধুই ধ্বংসের ছবি। রাশিয়ান আগ্রাসন ঠেকাতে এখনও প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনে প্রতিরোধের মুখে পড়ে রাশিয়ার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, আর খুব বেশিদিন রাশিয়ার আক্রমণ ইউক্রেনের পক্ষে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ইতিহাস সাক্ষী, পৃথিবীতে যখনই কোনও যুদ্ধ হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার কোনও না কোনও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। এক্ষেত্রে তার অন্যথা হবে না বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই এমন বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পরিণতির সামনে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক…
ন্যাটোর পুনরুত্থান
২০১৯ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক বিখ্যাত সংবাদপত্রকে জানিয়েছিলেন, বিশ্বের রাষ্ট্রনেতারা ‘ন্যাটোর ব্রেইন ডেথ’ লক্ষ্য করেছে। এমনকী সম্প্রতি তালিবানের আফগানিস্তান অধিগ্রহণের সময়েও ন্যাটোর ভূমিকা সমালোচনার মুখে পড়েছিল। কিন্তু কোনও প্ররোচনা ছাড়াই ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ, আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলিকে একত্রিত হতে সাহায্য করেছে। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে রাশিয়াই ন্যাটোকে জাগিয়ে তুলেছে। পশ্চিমী দেশের নেতারা জানিয়েছেন, তার ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে সরাসরি অংশ নেবে না কারণ এর ফলে যুদ্ধ আরও বাড়তে পারে। ন্যাটোর সদস্য দেশগুলি তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
সেনাবাহিনীর প্রতি বাড়তি নজর জার্মানির
রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধের সময় যখন বিভিন্ন দেশে ইউক্রেনকে সামরিক অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে এবং রাশিয়া ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তখনই নিজের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণে উদ্যোগী হয়েছে জার্মানি। সেনা আধুনিকীকরণের জন্য জার্মানি ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছে। জার্মান সরকার জানিয়েছে, এখন থেকে তারা দেশের মোট জিডিপির ২ শতাংশের বেশি সামরিক খাতে খরচ করবে।
নিরপেক্ষ নয় কেউই
বিংশ দশকে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সুইজারল্যান্ড নীতিগতভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিল। এমনকী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ও তার মিত্র শক্তি যখন দু’দিক থেকেই সুইজারল্যান্ডকে ঘিরে ধরেছিল, তখনও নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণের ফলে অবস্থান পুরোপুরি বদলে ফেলেছে সুইজারল্যান্ড। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর যে সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, সেই সবগুলিকেও সম্মতি দিয়েছে সুইজারল্যান্ড এবং তারাও একইরকমভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। সুইস সরকার সরকারিভাবে জানিয়েছে, তারা তাদের ঐতিহাসিক আগ্রাসন বিরোধী নীতি থেকে সরে এসেছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিস্তৃতি
ইউক্রেন অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায় ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি সোমবার সদস্যপদের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণ ইউক্রেনকে শুধুমাত্র পশ্চিমী দেশগুলির ঘনিষ্ঠ করেনি বরং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার রাস্তাও প্রসারিত করেছে। কারণ ইতিমধ্যেই জর্জিয়া জানিয়ে দিয়েছে, সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেনের আবেদন দ্রুত গৃহীত হবে