আহমেদাবাদ: আরও অনেকের মতো ‘আমেরিকান ড্রিম’ বা ‘মার্কিনি স্বপ্ন’ দেখেছিলেন পঙ্কজ প্যাটেল এবং নিশা প্যাটেলও। কোনওভাবে একবার আমেরিকায় গিয়ে পৌঁছতে পারলেই হল। তারপরই, স্বপ্নের জীবনযাপন। কিন্তু, তাঁদের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার মতো বৈধ নথি ছিল না। আর তাই পিছনের দরজা দিয়েই মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। গুজরাটের আহমেদাবাদে তাঁদের পরিবার অপেক্ষায় ছিল, কখন আমেরিকায় পৌঁছে তাঁরা ফোন করবেন। কিন্তু, সেই ফোন কল এখনও আসেনি। বদলে এসেছে পাকিস্তানি অপহরণকারীদের হুমকি-ফোন। বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ চেয়ে পঙ্কজ ও নিশার পরিবারকে জানানো হয়েছে, তাঁদের ইরানের তেহরানে এক গোপন আস্তানায় আটকে রাখা হয়েছে। মুক্তিপণের অর্থ না পেলে ছাড়া হবে না। সঙ্গে একটি ভিডিয়োও পাঠিয়েছে অপহরণকারীরা। সেই ভিডিয়োতে গুজরাটের তরুণ দম্পতির উপর অত্যাচার করতে দেখা গিয়েছে অপহরণকারীদের। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে আহমেদাবাদ সিটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
পুলিশ জানিয়েছে, পঙ্কজ এবং নিশা – দুজনেরই বয়স ২৯ বছর। তাঁরা আহমেদাবাদের নরোদা এলাকার বাসিন্দা। উন্নত জীবনযাপনের ইচ্ছায়, আমেরিকায় পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশের জন্য হায়দরাবাদের এক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। ওই এজেন্টই তাঁদের বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কথা ছিল, আহমেদাবাদ থেকে তাঁরা প্রথমে হায়দরাবাদ যাবেন। সেখান থেকে উড়ানযোগে যাবেন ইরানের তেহরানে। সেখান থেকে দুবাই হয়ে যাবেন মেক্সিকোতে। তারপর মেক্সিকো-আমেরিকার সীমান্ত পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন ‘স্বপ্নের দেশে’। কিন্তু, গুজরাটের এই দম্পতি তেহরানে নামার পর বিমানবন্দরেই পাকিস্তানি এজেন্টরা তাঁদের পাকড়াও করে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর, তাঁদের সেখানকার এক হোটেলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপরই, ভারতে তাঁদের ভিডিয়ো পাঠিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। যদিও, পঙ্কজ এবং নিশা এখন যে ইরানেই আছেন, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নয় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে, এই দম্পতিকে হায়দরাবাদ বা আহমেদাবাদেও আটকে রাখা হতে পারে।
তাঁরা জানিয়েছেন, পঙ্কজ বা নিশার কাছ থেকে তাঁরা কোনও ফোনকল পাননি। পাকিস্তানি এজেন্ট বলে দাবি করে যে ফোন করেছিল, সে পঙ্কজ প্যাটেলের একটি ভিডিয়ো পাঠিয়েছে। সেই ভিডিয়োতে পঙ্কজ এবং নিশাকে মারধর করতে দেখা গিয়েছে। এমনকি, পঙ্কজকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা গিয়েছে। ভিডিয়োতে পঙ্কজ তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপহরণকারীদের দাবি মেনে নিয়ে মুক্তিপণের অর্থ দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এরপরই, নরোদা এলাকার কৃষ্ণনগর থানায় এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি এফআইআর দায়ের করেছেন পঙ্কজ ও নিশার আত্মীয়বর্গ।
পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) চৈতন্য মন্ডলিক জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি দেশের বাইরে ঘটেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অপরাধ দমন শাখা এই ঘটনার বিষয়ে ইরানে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ওই দম্পতির সঙ্গে যা যা ঘটেছে তার সম্পূর্ণ বিবরণ দূতাবাসকে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অপহরণকারীদের পাঠানো ভিডিয়োটি দেখে পুলিশ ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আদৌ তাঁদের ইরানে অপহরণ করা হয়েছে, না কি দেশেই কেউ তাঁদের আটকে রেখেছে, ভিডিয়ো দেখে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এখনও পর্যন্ত, পঙ্কজ ও নিশার অবস্থান অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে। অপরাদ ধমন শাখার কর্তারা জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো সময় আসেনি। পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরই আমরা কিছু বলতে পারব।”