TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী
Nov 03, 2022 | 11:10 PM
মাত্র কয়েক মাস আগেই প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছিলেন, তাঁকে হত্যার চেষ্টা হতে পারে। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান অবশ্য বেঁচে গিয়েছেন, তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে। ইমরান খান এখন বিপদ মুক্ত। তবে, এই হামলা ফের পাকিস্তানের অশান্ত রাজনৈতিক ইতিহাসকে খুঁচিয়ে তুলেছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের গঠনের পর থেকে একের পর এক পাক রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যর কারণ হয়েছে কখনও ফাঁসি, কখনও গুলি কখনও বা আত্মঘাতী বোমা হামলা।
লিয়াকত আলি খান - ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির কোম্পানি বাগে হত্যা করা হয়েছিল , পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানকে। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি। মুসলিম লিগের এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়, মঞ্চেই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ সইদ আকবর নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাকারী হিসাবে চিহ্নিত করে সেখানেই তাকে গুলি করে খতম করেছিল। সে ছিল এক আফগান নাগরিক। কিন্তু, এই হত্যার পিছনে তার ঠিক কী উদ্দেশ্য ছিল, তা কখনই জানা যায়নি। তবে, লিয়াকত আলি খানের শাসনকালেই পাকিস্তানে ধর্মীয় চরমপন্থার প্রবেশ শুরু হয়েছিল। সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার লক্ষ্যেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
খান আব্দুল জব্বর খান - 'সীমান্ত গান্ধী' আব্দুল গফ্ফর খানের ভাই খান আব্দুল জব্বর খান ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৫৮ সালের ৯ মে আট্টা মহম্মদ নামে এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যা করেছিলেন। সেই সময় জব্বর খান লাহোরে তার ছেলের বাড়ির বাগানে বসে ছিলেন। আসন্ন সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর, আততায়ী ছিল মিয়ানওয়ালির ভূমি রাজস্ব বিভাগের এক অসন্তুষ্ট কেরানি। ঘটনার দুই বছর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
জুলফিকার আলি ভুট্টো - জুলফিকার আলি ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৯ সালে, জেনারেল জিয়া-উল হকের সামরিক শাসন চলাকালীন ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তৎকালীন পাকিস্তানের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তিনি। আইন বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনাকে 'জুডিশিয়াল মার্ডার' অর্থাৎ 'বিচারবিভাগীয় হত্যা' বলেই মনে করেন। ১৯৭৭ সালে জুলফিকারের বিরুদ্ধে একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন সেনাপ্রধান জিয়া।
জিয়া-উল হক - জিয়ার মৃত্যুও স্বাভাবিকভাবে হয়নি। ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া নয় বছর পর, ১৯৮৮ সালের ১৭ অগস্ট এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল জিয়া-উল হকের। এই ঘটনা পরিকল্পিত হত্যা বলেই অনেকে মনে করেন। জুলফিকার আলি ভুট্টোর ছেলে তথা বেনজির ভুট্টোর ভাই মুর্তাজা ভুট্টোই এই হত্যার ছক কষেছিলেন বলে দাবি করা হয়। তবে, এই বিষয়ে কিছুই প্রমাণিত হয়নি।
মীর মুর্তাজা ভুট্টো - জিয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় যে মীর মুর্তাজা ভুট্টোকে, তাঁরও মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিকভাবেই। ১৯৯৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর করাচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি। ওই ঘটনার তাঁর সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর দলের অন্য ছয় কর্মীরও।
জেনারেল পারভেজ মোশারফ - ২০০৩ সালে সামরিক শাসক জেনারেল মোশারফকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে, ইমরানের মতোই তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন দেশের একচ্ছত্র শাসক। রাওয়ালপিন্ডিতে তাঁর অতি-সুরক্ষিত কনভয় একটি সেতু অতিক্রম করার কয়েক মিনিট পরই সেখানে তীব্র বিস্ফোরণে সেতুটি উড়ে গিয়েছিল। তাঁর গাড়িতে একটি জ্যামিং ডিভাইস থাকায় তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। ওই জ্যামিং ডিভাইস দূর-নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ রুখে দিয়েছিল। ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর ফের তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ক্ষেত্রেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন মোশারফ। এরপর ২০০৭ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি সাবমেশিনগান থেকে তাঁর বিমান লক্ষ্য করে ৩০ রাউন্ডেরও বেশি গুলি চালানো হয়েছিল। সেই বারও আরেকটি জীবন পেয়েছিলেন এই প্রাক্তন পাক সামরিক শাসক।
বেনজির ভুট্টো - যে কোম্পানি বাগে লিয়াকত আলি খানকে হত্যা করা হয়েছিল, পরে সেটির নামকরণ করা হয়েছিল লিয়াকত বাগ। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর, এখানেই হত্যা করা হয়েছিল আরেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী তথা ভুট্টো পরিবারের আরেক সদস্য, বেনজির ভুট্টোকে। তার আগে ওই বছরই করাচিতেও একটি বোমা হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন বেনজির। ওই ঘটনায় ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৭-এ আট বছর পর দেশে ফিরে পাকিস্তানের দুইবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তৃতীয়বার শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আজ পর্যন্ত, ভুট্টোকে হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিল, সেই বিষয়টি অস্পষ্ট। অনেকেই এর পিছনে তালিবানদের হাত ছিল বলে মনে করেন। প্রায় এক দশক পর, জেনারেল পারভেজ মোশারফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর প্রশাসনের কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।