জাকার্তা: গোটা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে কুসংস্কার। দুর্বল চিত্তের মানুষ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে তন্ত্র-মন্ত্রের আশ্রয় নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর ফল হয় মারাত্মক। কখনও কখনও তন্ত্র মন্ত্রের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ঠান্ডা মাথার অপরাধীরাও। তন্ত্রের দোহাই দিয়ে চলে গুরুতর অপরাধ। এমনই এক তান্ত্রিক তথা সিরিয়াল কিলার ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। তন্ত্র-মন্ত্রের অজুহাতে অন্তত ৪২ জন কুমারী মেয়েকে হত্যা করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এমনকি, ১১ বছরের নাবালিকাকেও ছড়েনি সে। আরও আশ্চর্যের হত্যার পর, ওই মেয়েদের মুখের লালা পান করত সে।
তার নাম ছিল আহমেদ সুরদজি। বহু মহিলা তাঁর কাছে আধ্যাত্মিক পরামর্শ নিতে বা কোনও সমস্যা দূর করতে আসত। আর তাদেরই তন্ত্র-মন্ত্রের অজুহাতে হত্যা করত সে। প্রথমে মহিলাদের সে বাড়ির পাশের একটি আঁখ ক্ষেতে নিয়ে আসত। তারপর ওই মহিলাদের দিয়েই ক্ষেতের এক জায়গায় গর্ত খোঁড়াত। সে বলত, এটা তন্ত্রেরই একটা অংশ। তারপর ওই গর্তে মহিলাদের কোমর অবধি পুঁতে দিত। তারা চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়লে, সে শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করত। তারপর তার মুখ থেকে লালা বের করে, সেই লালা পান করত। পরে ওই আঁখ ক্ষেতেই ওই মহিলাদের দেহ পুঁতে দিত।
কেন এমন অদ্ভুত কাণ্ড করত সে? ধরা পড়ার পর সুরদজি দাবি করেছিল, তার বাবা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন একজন তান্ত্রিক। তিনি না কি বলেছিলেন, সুরদজিকে তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বাড়াতে হলে ৭০ জন কুমারী মেয়ের লালা পান করতে হবে। সুরদজি আরও জানিয়েছিল, তার বাবা কিন্তু কাউকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু,হত্যা করলে লালা পান করাটা সহজ হবে মনে করে, সে নিজেই হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে অন্তত ৪২ জনকে সে একইভাবে হত্যা করেছিল।
১৯৯৭ সালের এপ্রিলে ওই আঁখ ক্ষেতে কমলা দেবী নামে ২১ বছরের এক যুবতীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ক্ষেতে গর্ত দেখে স্থানীয় একজনের সন্দেহ হয়েছিল। একটু খুঁড়তেই বেরিয়ে এসেছিল এক মহিলার আঙুল। এরপর তিনি পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। একজন রিকশাচালক পুলিশকে জানিয়েছিল, তিনি তিন দিন আগে সে কমলা দেবীকে, সুরদজির বাড়িতে নামিয়েছিল। এরপরই পুলিশ সুরদজিকে গ্রেফতার করে। সে অবশ্য প্রথমে হত্যার কথা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু পুলিশ তার বাড়িতে কমলা দেবীর ব্যাগ, পোশাক এবং ব্রেসলেট খুঁজে পায়। পরে সুরদজি ৪২ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছিল। ২০০৮ সালে উত্তর সুমাত্রায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।