তেহরান: আমরণ অনশনে বসেছেন একঝাঁক ইরানি তরুণী। তেহরানের কাচৌই জেলের ভিতর। যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল মাসহা আমিনির মৃত্যুর পর, তার আঁচ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিজাব বিরোধী আন্দোলনে (Anti Hijab Protest) কয়েক হাজার পুরুষ-নারীকে গ্রেফতার করে ইব্রাহিম রইজির সরকার। শুধুই গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত থাকেনি। অভিযোগ উঠেছে, অকথ্য অত্যাচার চালানোর। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দোষী সাব্যস্ত যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের প্রকাশ্যে ফাঁসিও দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কয়েক মাস ধরে বন্দি থাকা ইরানি তরুণীরা দমে যাননি। জেলে বসেই আমরণ অনশন শুরু করেছেন তাঁরা। মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁদের অভিযোগ, জেলের ভিতর নিপীড়ন করা হচ্ছে তাঁদের। মামলা লড়ার জন্য আইনজীবী দেওয়া হচ্ছে না। মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের এই অনশন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যেমন বলা যায়, ইরানি শিল্পী ইলাহম মোদারেসির কথা। তিনি আজ এতটাই অসুস্থ, আর দুই দিন জেলে থাকলে ইলাহমের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ইলাহমকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কাতর আর্জি জানিয়েছেন তাঁর দিদি মোঝগান মোদারেসি। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর বোন গুরুতর যকৃত সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর শরীর উত্তরোত্তর অবনতির দিকে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও নিপীড়ন করা হচ্ছে তাঁর উপর। মোঝগানের অভিযোগ, ইরানে মানবাধিকার কমিশন বলে কিছুই নেই। সব দেখে ঘুমোচ্ছেন তাঁরা।
ইলাহমদের উপর কেন অত্যাচার করা হচ্ছে? তার যুক্তিও দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। জেলের ভিতর তাঁদের বলা হচ্ছে হিজাব বিরোধী আন্দোলন করে পাপ কাজ করেছেন তাঁরা। বারবনিতার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে তাঁদের।
Please help my sister!?#ElhamModaressi #MahsaAmini
@amnesty @AmnestySverige @Utrikesdep @AmnestyUK pic.twitter.com/UWFBDV4Agt— رز- Free #ElhamModaressi (@mozhganmodaress) January 6, 2023
ইলাহমের কিছুদিন আগেই যকৃত প্রতিস্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে এই অনশন তাঁকে কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা তো দূরস্থ, তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালানোয় শরীর ভেঙে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মোঝগান সুইডেন থাকলেও তাঁদের ভাই ও মা ইলাহমের কাছেই থাকে। মায়ের হার্টের সমস্যা রয়েছে। তাঁর ভাই প্রতিদিন নিয়ম করে জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, এই আশায় যে, আজ হয়ত ছাড়া পাবে ইলাহম। গত ২ নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় হিজাব বিরোধী আন্দোলনের জন্য। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ৩২ বছর বয়সী শিল্পীকে। আইন-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে তাঁকে জেলে পোরা হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, হিজাব বিরোধী আন্দোলনের জেরে এখনও পর্যন্ত ১৮ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫০০ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে বলে খবর। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি, বর্তমানে ২৬ জন নাগরিককে ফাঁসি দেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যে ১১ জনকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়ে গিয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ‘ক্যাপিটল পানিসমেন্টের’ মামলা চলছে। তবে, ইলাহমের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ রয়েছে, ফাঁসির সাজা নাও হতে পারে। কিন্তু রাতারাতি এমন সিদ্ধান্ত তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া হবে না, এমনও হলফ করে বলতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। এখন তাঁদের শুধু আশঙ্কা, ফাঁসি হোক না হোক, আর দু’দিন গেলে হয়ত ইলাহমের মৃত্যু নিশ্চিত।