গাজা: ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই জল্পনা চলছে, কবে গাজা ভূখণ্ডে ঢুকে পাল্টা আক্রমণ চালাবে ইজরায়েল। আকাশপথে লাগাতার হামলা চললেও, এখনও পর্যন্ত স্থলপথে গাজায় প্রবেশ করেনি ইজরায়েলি বাহিনী। তাদের অভিযানের পথে প্রধান বাধা গাজায় হামাসের তৈরি অসংখ্য সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গগুলি এতদিন ইজরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাসের প্রতিরক্ষার উপায় ছিল। গাজায় ইজরায়েলি সেনা প্রবেশ করলে, সুড়ঙ্গগুলি তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অবস্থায়, গাজায় স্থলপথে আক্রমণ শুরু করার আগে হামাসের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলিতে ‘বন্যা-বোমা’ ফেলার কথা ভাবছে ইজরায়েলি সামরিক নেতৃত্ব। অর্থাৎ, সুড়ঙ্গগুলি জলে ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনই দাবি করেছেন, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক সেমুর হার্শ।
ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনে হার্শ লিখেছেন, “ইজরায়েল এখন অবিরাম বোমাবর্ষণের মাধ্যমে গাজা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করার পরিকল্পনাও করছে। তার আগে তারা ভূমধ্যসাগরের জলে গাজার সূড়ঙ্গগুলি ভাসিয়ে দিতে পারে। এই সুড়ঙ্গগুলিতে ইজরায়েলি যুদ্ধবন্দিরা থাকতে পারেন। সূড়ঙ্গগুলি প্লাবিত করার অর্থ, ইজরায়েল সেই যুদ্ধবন্দিদের প্রাণের ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত।” মার্কিন সাংবাদিকের আরও দাবি, গাজায় হামাসের তৈরি ভূগর্ভস্থ টানেল পরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার এই প্রচেষ্টায় ইজরায়েলের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এর আগে হার্শ বলেছিলেন, “গাজাকে হিরোশিমায় পরিণত করতে চলেছে ইজরায়েল। শুধু ওরা পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করছে না। তা ছাড়াই সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চলেছে গাজাকে।”
প্রায় এক দশক ধরে গাজায় মাটির নীচে একের পর এক সূড়ঙ্গ খুঁড়ে, সূড়ঙ্গপথের এক বিশাল জাল বিছিয়েছে হামাস। মনে করা হয়, প্রায় ১০০০টি সূড়ঙ্গ রয়েছে গাজায়। প্রাথমিকভাবে এই সূড়ঙ্গগুলি ব্যবহার করা হত মিশর থেকে চোরাপথে গাজায় বিভিন্ন পণ্য আনার জন্য। কারণ, ইজরায়েল গাজায় বাইরের কোনও পণ্য ঢুকতে দেয় না। পরবর্তীকালে, হামাস এবং প্যালেস্তিনীয় ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর যোদ্ধারা এই সূড়ঙ্গগুলি রকেট এবং রকেট লঞ্চার আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা শুরু করে। ইজরায়েলি উপগ্রহ এবং বিমানের নজর এড়াতেও এই সূড়ঙ্গগুলিকে কাজে লাগায় তারা। ইজরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালাতেও কাজে লাগে সূড়ঙ্গগুলি। সূড়ঙ্গের জালের মধ্যেই তাদের অস্ত্রাগারও রয়েছে। কাজেই সূড়ঙ্গগুলি ভাসিয়ে দিতে পারলে, সেগুলি ধ্বংস করতে পারলে, হামাসের শক্তি ব্যাপকভাবে কমবে বলে আশা ইজরালি বাহিনীর।
তবে, শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সেনা কর্তাদের দাবি, গাজায় স্থলপথে আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত নয় ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। কারণ এই হামলায় খুব বেশি সামরিক লক্ষ্য অর্জন হবে বলে মনে করছে না সামরিক নেতৃত্ব। তবে, সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই গাজায়স্থলপথে হামলা শুরু করছে না তেল আবিব। এদিকে, হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, ইজরায়েলকে তাদের সামরিক অভিযানে সহায়তা করতে মার্কিন সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ অফিসারদের ইজরায়েলে পাঠানো হয়েছে।