
টোকিও: সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ, খাদ্য, বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধা অনুসারে বারে-বারে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই ঘুরে দেখা হয়ে গিয়েছে। এরপর হয়ত, ‘অন্য পৃথিবী’র খোঁজে মানুষ পাড়ি দেবে দূর মহাকাশে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন অদুর ভবিষ্যতেই মানুষ বহু-গ্রহী প্রাণীতে পরিণত হবে। অর্থাৎ, আর একটি গ্রহে আটকে থাকবে না মানব সভ্যতা। ছড়িয়ে পড়ূবে পৃথিবী-সম অন্য কোনও গ্রহে। আর অন্য গ্রহে সভ্যতাকে ছড়িয়ে দিতে গেলে, সেই গ্রহে বা মহাকাশে খাদ্য-বাসস্থান নিশ্চিত করাটা যেমন প্রয়োজন, তেমনই জানা প্রয়োজন সেখানে মানুষ আদৌ বংশবিস্তার করতে পারবে তো? পৃথিবীর বাইরে গর্ভবতী হতে পারবে মানুষ? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা ঠিকই, তবে, উত্তরের খোঁজে প্রথম পদক্ষেপটা নিয়েই ফেলল মানুষ। প্রথমবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বিকাশ ঘটল ইঁদুরের ভ্রুণের।
মহাকাশে কি মানব প্রজনন সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজেই এই পরীক্ষা করেছেন জাপানের ‘ইয়ামানাসি বিশ্ববিদ্যালয়ে’র অধ্য়াপক তেরুহিকো ওয়াকাইয়ামার নেতৃত্বে একদল গবেষক। এর জন্য, ২০২১ সালের অগস্টে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে স্পেসএক্সের একটি রকেটে করে কয়েকটি ইঁদুরের ভ্রুণ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ জার্নালে তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই নিবন্ধ অনুযায়ী, প্রথমে কয়েকটি গর্ভবতী ইঁদুর থেকে দুই কোষ বিশিষ্ট ভ্রুণ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারপর সেগুলিকে ঠান্ডায় জমিয়ে পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে। সেখানে বিশেষ নকশা করা এক যন্ত্রে রাখা হয়েছিল জমাট ভ্রুণগুলিকে। জরায়ুর বাইরে চারদিন মতো জীবিত থাকতে পারে ভ্রুণ। ওই ভ্রুণগুলিকেও চরদিনই রাখা হয়েছিল মহাকাশে। তারপর ফিরিয়ে আনা হয় পৃথিবীতে।
মহাকাশে বিভিন্ন বিকীরণ রয়েছে, সেই সঙ্গে মহাকর্শ শক্তিও নগন্য বললেই চলে। এই পরিস্থিতি ভ্রুণগুলির উপর কী প্রভাব ফেলে, এই পরীক্ষায় সেটাই দেখতে চেয়েছিলেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, মহাকাশে থাকার জন্য ভ্রুণগুলির ডিএনএ কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সেই সঙ্গে, ভ্রুণগুলির স্বাভাবিক বিকাশও ঘটেছে। ফিটাস ও প্লাসেন্টা এই দুই ধরণের কোষে বিভক্ত হয়েছে ভ্রুণগুলি। এর আগে মনে করা হত, কম মাধ্যাকর্ষণের কারণে, মহাকাশে ভ্রুণের এই দুই ধরণের কোষে বিভাজন হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু, এই পরীক্ষা সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে।
গর্ভাবস্থার পরবর্তী অংশে মহাকাশে কোনও সমস্যা হবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে, এর আগে নাসার পক্ষ থেকে গর্ভবতী ইঁদুরদের মহাকাশে পাঠিয়ে এক পরীক্ষা করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, মহাকাশে মাতৃগর্ভে ভ্রুণগুলির স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব। এই দুই গবেষণার ভিত্তিতে ইয়ামানাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করছেন, সম্ভবত মহাকাশে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রজনন সম্ভব। তবে মহাকাশে সত্যি সত্যি ইঁদুরছানার জন্ম দেওয়া বা মানবশিশুর জন্ম দেওয়া বেশ অসুবিধাকর হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। এরপর, মহাকাশ থেকে ফেরা ভ্রুণগুলি কোনও মহিলা ইঁদুরের জরায়ুতে রোপন করে ইদুরছানর জন্ম দেওয়া যায় কিনা, সেই পরীক্ষা করা হবে।