নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশের ‘বিপ্লব’ এবং মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দিল আমেরিকা। এটা যে হবে, তার ইঙ্গিত অবশ্য আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ঢাকায় এসে বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি করেছিল ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। তবে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর), খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনকে পূর্ণ সমর্থন দিলেন। এদিন, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অধ্যাপক ড. মহম্মদ ইউনুস।
বৈঠকে বাইডেনকে কী জানান ইউনুস? হাসিনা সরকারের আমলে কী কী ভাবে নিপীড়ন হয়েছে, তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সাহসের সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছিল, বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তারা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, সেই গল্প শোনান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভক ‘জুলাই বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেন ইউনুস। ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ (বিজয়ের শিল্প) একটি আর্টবুকও তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উপহার দেন। তাতে, আন্দোলন চলাকালীন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে সমস্ত দেওয়ালচিত্র এঁকেছিল সেই সবের ছবি রয়েছে। ইউনুস আরও জানান, বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাঁর সরকারকে সফল হতেই হবে।
ইউনুসের মুখে বিপ্লবের কাহিনি শুনে জো বাইডেনও যে কোনও প্রয়োজনে ইউনুস সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বাইডেন বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরও বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতা করা উচিত।”
তবে, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানের পিছনে আমেরিকার হাত আছে কিনা, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, এই অভিযোগ করেছিলেন খোদ শেখ হাসিনা। তাঁর দাবি, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে সেনাঘাঁটি বানাতে চায় আমেরিকা। তিনি তাতে রাজি না হওয়াতেই, এই অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। অতীতে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার এই ধরনের কান্ড ঘটানোর ইতিহাসও রয়েছে। বস্তুত, হাসিনা সরকারের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক ছিল আদায়-কাঁচকলায়। অপরদিকে, ইউনুস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। হাসিনা বিদায়ের দুদিনের মধ্যে ইউনুস যেভাবে এসে হাল ধরেছিলেন এবং এখন আমেরিকা যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোলাকুলি করছে, তাতে সন্দেহের মেঘটা কিন্তু গাঢ় হতে বাধ্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৩০ বছরের মধ্যে এই প্রছম কোনও বাংলাদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছাড়াও কানাডা, ব্রাজিল-সহ আরও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর প্রধানদের সঙ্গে এদিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ইউনুস। l