নয়া দিল্লি: কোভিড-১৯ মহামারির বিপদ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার আগেই, শিয়রে অন্য বিপদ – ‘মাঙ্কিপক্স’ (Monkeypox)! মে মাসের শুরু থেকে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার কয়েক ডজন ‘মাঙ্কিপক্স’ আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। শুধু তাই নয়, আফ্রিকার কোনও কোনও অংশেও এই ভাইরাস-ঘটিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাস সাধারণত ইঁদুর গোত্রের প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নয়া মহামারির দিকে তাঁরা নজর রাখছে। প্রাথমিকভাবে তারা মনে করছে, এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে যৌন সম্পর্ক থেকে।
ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে ‘মাঙ্কিপক্স’
ইতিমধ্যেই, স্পেন ও পর্তুগালে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ ‘মাঙ্কিপক্স’এ আক্রান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটেনে ৯টি ‘মাঙ্কিপক্স’এর মামলা নিশ্চিত করা হয়েছে। মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গিয়েছে, বাকিদের ক্ষেত্রে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার, প্রথম সংক্রমণের ঘটনা সনাক্ত করা হয়েছে আমেরিকায়। শুক্রবার, কানাডা, সুইডেন এবং ইটালি থেকেও ‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে।
‘মাঙ্কিপক্স’ কী?
‘মাঙ্কিপক্স’ প্রায় ‘স্মলপক্সের’ মতোই একটি রোগ, তবে এটি অতি বিরল ভাইরাস ঘটিত রোগ। ১৯৫৮ সালে এই ভাইরাস আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে, মানব দেহে প্রথম এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছিল ১৯৭০ সালে। বানরদের উপর গবেষণা করতে গিয়ে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল বলেই, এই রোগের নাম হয়েছে ‘মাঙ্কিপক্স’।
উপসর্গ, চিকিৎসা ও মৃত্যুর সম্ভাবনা
জ্বর, পেশীর ব্যথা, ব়্যাশ বের হওয়া এবং সর্দি লাগা মানব দেহে মাঙ্কিপক্সের সাধারণ লক্ষণ। মোটামুটি ভাবে সংক্রামিত হওয়ার ৬ থেকে ১৩ দিনের মধ্যেই এই লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। ‘হু’এর দাবি, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
‘মাঙ্কিপক্সের’ কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও নেই। রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সাধারণত আক্রান্তদের কোনও হাসপাতালে নিভৃতবাসে রাখা হয়। রোগের চিকিৎসা না করা গেলেও, উপসর্গগুলির চিকিৎসা করা যায়।
এখনও পর্যন্ত ইউরোপ আমেরিকায় কারোর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম সংক্রমণ সনাক্ত করার পর থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মাঝে মাঝেই স্থানীয় স্তরে ‘মাঙ্কিপক্স’ মহামারি দেখা গিয়েছে। আফ্রিকায় দেখা গিয়েছে প্রতি ১০ জন সংক্রামিতের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কীভাবে ছড়ায় পশু থেকে মানবদেহে?
আগেই বলা হয়েছে ‘মাঙ্কিপক্স’ ছড়ায় ইঁদুর, কাঠবিড়ালির মতো ‘রোডেন্ট’ অর্থাৎ ইঁদুর গোত্রের প্রাণী থেকে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্রধানত, সংক্রামিত ‘রোডেন্ট’দের কামড় থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে মানব দেহে। এছাড়া, সংক্রামিত প্রাণীদের স্পর্শ, রক্ত, লোম বা দেহরস থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক সময়ে, ভাল করে রান্না না করা হলে, সংক্রামিত প্রাণীর মাংস ভক্ষণ থেকেও ‘মাঙ্কিপক্স’ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যৌন সংসর্গ নিয়ে ‘হু’এর সতর্কতা
এদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির দিকে তারা নজর রাখছে। তবে এই বিষয়ে আরও তথ্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। স্থানীয় স্তরে ‘মাঙ্কিপক্স’ কতটা ছড়াচ্ছে, স্থানীয় বাসিন্দারা কতটা বিপদে, সেই সঙ্গে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কতটা – সবই বিবেচনা করে দেখছে ‘হু’।
সংস্থার সহকারি মহাসচিব ডাক্তার সোশে ফল বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যেসব পুরুষ অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যেই এই রোগ ছড়াচ্ছে। স্থানীয় স্তরে ‘মাঙ্কিপক্স’ রোগের বিস্তার সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে, আমাদের এই নতুন তথ্য ঠিকভাবে খতিয়ে দেখতে হবে’।
আক্রান্তদের অধিকাংশই ‘গে’ বা ‘বাইসেক্সুয়াল’ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে, এখনই এই রোগকে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিসিজ বলতে নারাজ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন সঙ্গমের সময়, সরাসরি স্পর্শ থেকেও এই রোগ ছড়িয়ে থাকতে পারে।