লন্ডন: দেশ জুড়ে দ্রুত হারে বাড়ছে ওমিক্রন (Omicron) আক্রান্তের সংখ্যা। কয়েকদিনের ব্যাবধানেই দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্য়া, এই পরিস্থিতিতে আরও ভয়ের কথা শোনাল ব্রিটেন সরকারের পরামর্শদাতারা (UK Government Advisories)। তাদের দাবি, এটা কেবল হিমশৈলের চূড়া। সংক্রমণের শিকড় ছড়িয়ে গিয়েছে দেশের অন্দরে।
দক্ষিণ আফ্রিকা(South Africa)-এ প্রথম খোঁজ পাওয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট (Omicron Variant) ইতিমধ্যেই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রিটেন ও ডেনমার্কে। ২৪ ঘণ্টাতেই প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি আক্রান্তের খোঁজ মেলায়, শুক্রবারই ব্রিটেনে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ছুঁয়েছে।
আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বৃহস্পতিবার অবধি ৭ জন ওমিক্রন আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকারের জরুরি বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতাদের তরফে জানানো হয়েছে, দৈনিক হাজার হাজার বা লক্ষাধিক মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন, এ কথা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু এখনও সরকার তা চিহ্নিত করতে পারছে না। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হাসপাতালে দৈনিক ৩ হাজার মানুষ ভর্তি হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছরের জানুয়ারি মাসেও ব্রিটেনে করোনা টিকাকরণ শুরু হওয়ার আগেও হাসপাতালে দৈনিক রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যা ৪ হাজার ছিল। সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই কড়া নিয়ম জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (Boris Johnson)। দলের সদস্যরা বিরোধিতা করলেও বিরোধী পক্ষের ভোটের জোরেই নাইটক্লাব সহ একাধিক জায়গায় প্রবেশে করোনা টিকার শংসাপত্র দেখানোর নিয়ম পাশ করানো হয়। এছাড়াও বদ্ধ জায়গায় জমায়েত বা ক্রীড়ামূলক কোনও অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে করোনাটিকার শংসাপত্র বা করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাইরে বের হলেই মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধ্য়তামূলকভাবে টিকাপ্রাপ্ত হতে হবে। বাড়িতেও মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে সরকারি পরামর্শদাতাদের দাবি, সংক্রমণ কতটা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে, তা এখনও আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে তুলনা করলে বলাই চলে যে, দ্রুত হারে রোগী সংখ্য়া বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলির উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি হবে। ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে সরকারের থেকে আরও সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের আরও ভাল সমন্বয় প্রয়োজন বলেও তিনি জানান। তাঁর দাবি, সংক্রমণ বাড়ায় একদিকে যেমন হাসপাতালগুলিতে চাপ বেড়েছে, তেমনই স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই কাজে আসতে চাইছেন না। এতেই বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এই সপ্তাহ শেষেই স্কটল্য়ান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের প্রশাসকদের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য নিয়ে বৈঠকে বসার কথা ছিল। ওই বৈঠকেই করোনাবিধি আরও কঠোর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ক্রিসমাসের সময়ে পাব ও রেস্তরাঁগুলিতেও সীমীত সংখ্যক টেবিলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।