
আমাদের দেশে সংসদে বা বিধানসভায় কোনও সাংসদ বা বিধায়ক অসত্য কিছু বললে তাঁর বিরুদ্ধে স্পিকার ব্যবস্থা নিতে পারেন। আইনসভার ওই সদস্যের বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ মোশন আনা যায়। পাকিস্তানে কী হয় কে জানে। নিয়ম নিশ্চই ওদেরও আছে। তবে, সেসব কতটা বাস্তবে মেনে চলা হয়, সেটা বলা কঠিন। কারণ, তাহলে তো খোদ পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশক দারের বিরুদ্ধেই প্রিভিলেজ মোশন আসার কথা। কেন? ভারতের অপারেশন সিঁদুরে পাক সেনা ল্যাজে-গোবরে হয়েছে। পাকিস্তানের শাসকদলের পক্ষে তো প্রকাশ্যে তা স্বীকার করা সম্ভব নয়। তাই পাক সেনেটে পাক সেনার বীরত্বের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন বিদেশমন্ত্রী ইশক দার। আজগুবি সব গল্প ভাল চলছিল। তারপর হঠাত বিপত্তি। মন্ত্রীমশাই নিজের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি হিসাবে পেশ করলেন ১০ মে-এর দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের ফ্রন্ট পেজ। সেখানে ব্যানার হেডলাইনে লেখা রয়েছে, ‘Pakistan Air Force: The undisputed king of the skies’. মানে ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ভারতীয় বায়ুসেনাকে টেক্কা দিয়েছে। সঙ্গে একটা JF-17-এর ছবি।
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো ফ্যাক্ট চেক করে জানিয়ে দিয়েছে, সমস্তটাই ভুয়ো। এআই-এর সাহায্য নিয়ে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের নকল ফ্রন্ট পেজ তৈরি করা হয়েছে। ব্রিটেনের নৌ-সেনা প্রধান তাঁর অধস্তন এক মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নেভি চিফের পদ খুইয়েছেন। ১০ তারিখ ওই ব্রিটিশ নিউজ পেপারের প্রথম পাতায় সবার ওপরে এই খবরটা ছিল। হেড লাইন ছিল Navy chief quits ‘over affair with junior‘. সেখানে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ নিয়ে একটা শব্দও ছিল না। ফলে, গোটা ঘটনায় পাক সরকারের বেইজ্জতির একশেষ হয়েছে। আর শুধু ভারত কেন, পাকিস্তানের নানা মিডিয়াই ফ্যাক্ট চেক করে জানিয়ে দিয়েছে তাদের বিদেশমন্ত্রী ভুয়ো খবরের ওপরে ভিত্তি করে সেনেটে স্পিচ দিয়েছেন।
দ্য ডন যেমন বলেছে, যে আর্টিকলের কথা তাদের বিদেশমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন তাতে বহু জায়গায় ভুল বানান আর ভুল বাক্য রয়েছে। ডেইলি টেলিগ্রাফে এমন লেখা ছাপা হতেই পারে না। অপারেশন সিঁদুরে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর থেকে ফেক নিউজ ছড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। খবর যে পাক সেনার মুখপাত্র Lieutenant General Ahmed Sharif Chaudhry নিজে এই প্রজেক্টের দেখভাল করছেন। তবে ওই যে বলে না, dig a pit for others, and see yourself fall in it. চৌধুরি সাহেব ভাবতেও পারেননি যে তাঁর খোঁড়া গর্তে খোদ তাঁর দেশের বিদেশমন্ত্রীই এসে পড়বেন। ইশক দার তো জানতেন যে তিনি অসত্য কথা বলছেন। তাহলে সেই অসত্য খবর টেলিগ্রাফ ছাপবে কেন, এটা তার মনে হল না। এটা মনে হল না যে ব্রিটেনের কোনও কাগজ তাদের দেশের খবর বাদ দিয়ে ফ্রন্ট পেজে ব্যানার হেডলাইন করে শুধুমাত্র পাকিস্তানের খবরই বা রাখবে কেন। তাহলে কি পাক বিদেশমন্ত্রী সবকিছু জেনে ইচ্ছে করেই ভুয়ো খবর পেশ করেছেন। প্রশ্নটা এখানে।