লিমা: পৃথিবীর প্রায় সকল আদিম উপজাতিই তথাকথিত সভ্যতার ছোঁয়া পেয়েছে। আন্দামানের জারোয়াদের মতো, হাতে গোনা কয়েকটি উপজাতি অবশ্য এখনও বিচ্ছিন্নই থাকতে চায়। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মেলামেশার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তাদের নেই। এই রকমই এক উপজাতি পেরুর আমাজন জঙ্গলের গভীরে বসবাসকারী উপজাতি ‘মাশকো পিরো’। অতীতে তাদের কোনও ছবি পর্যন্ত তোলা যায়নি। তারাই হল সভ্যতার সঙ্গে একেবারে যোগাযোগহীন সবথেকে বড় উপজাতি গোষ্ঠী। তবে, সম্প্রতি ‘সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে এক আদিবাসী অধিকার গোষ্ঠীর ক্যামেরায় ধরা পড়ল ‘মাশকো পিরো’উপজাতির সদস্যদের বিরল ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে এই উপজাতির বেশ কয়েকজন সদস্য একটি নদীর তীরে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
তবে, এই ছবিকে কেন্দ্র করে মাশকো পিরোদের সুস্থতা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে আদিবাসী অধিকার গোষ্ঠীগুলির মধ্যে। স্থানীয় এক অধিকার গোষ্ঠীর দাবি, ওই এলাকায় ক্রমবর্ধমান গাছ কাটার ফলে এই উপজাতি তাদের এতদিনের ভিটে-মাটি ছেড়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খাবার এবং নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। আর তাই, এতদিন গোপনে থাকার পর এই প্রথম ক্যামেরা বন্দি হল তারা।
সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এই ছবিগুলি চলতি বছরের জুন মাসের শেষের দিকে তোলা। জায়গাটা ব্রাজিলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্ব পেরুর, মাদ্রে দি দিওসের এক নদীর তীর। সংস্থআর ডিরেক্টর, ক্যারোলিন পিয়ার্স জানিয়েছেন, এই ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন মাশকো পিরোরা যেখানে বসবাস করে, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই গাছ কাটা চলছে। আর সেই কারণেই, ইদানিং ওই এলাকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে মাশকো পিরোদের।
❗️ New & extraordinary footage released today show dozens of uncontacted Mashco Piro Indigenous people in the Peruvian Amazon, just a few miles from several logging companies.
Read the news: https://t.co/g9GrZlf3XB pic.twitter.com/fZv5rryzVp
— Survival International (@Survival) July 16, 2024
এই ছবিগুলি তোলার কয়েকদিন আগেই এই উপজাতির ৫০ জনেরও বেশি সদস্যকে ইয়িন উপজাতির এক গ্রামের কাছে দেখা গিয়েছিল। ১৭ জনের আরেকটি দলকে দেখা গিয়েছিল পুয়ের্তো নুয়েভোর নিকটবর্তী এক গ্রামে। ২৮ জুন পেরুর সরকার জানিয়েছিল, মাদ্রে দে দিওসের রাজধানী পুয়ের্তো মালডোনাডো শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে লাস পিদ্রাস নদীর তীরেও মাশকো পিরোদের দেখেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। সম্প্রতি, ব্রাজিলের সীমান্তের ওপারেও তাদের দেখা গিয়েছে। অথচ, ইয়িন বা অন্য কোনও উপজাতির সঙ্গেও খুব বেশি যোগাযোগ রাখে না মাশকো পিরোরা।
আসলে, প্রাচীন কাল থেকেই, মাদ্রে দি দিওসের দুটি সংরক্ষিত অরণ্যের মধ্যে অবস্থিত এক অঞ্চলে তারা বসবাস করে। কিন্তু, এই অঞ্চলে গভীর জঙ্গলের ভিতরেও বেশ কিছু লগিং সংস্থাকে কাঠ কাটার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। একটি সংস্থা তো কাঠ বহনের ট্রাক চলাচলের জন্য জঙ্গলের ভিতরে ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। মাদ্রে দি দিওসে ৫৩,০০০ হেক্টর বনাঞ্চলে, সেডার এবং মেহগনি কাঠ কাটার জন্য তাদের ছাড়পত্র দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আর এতেই বিপদে পড়েছে সভ্যতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা মাশকো পিরোরা। আদিবাসী অধিকার রক্ষা গোষ্ঠীগুলি জানিয়েছে, এই উপজাতি খুবই ভীতু। বাইরের লোক দেখলেই পালিয়ে যায়। আর সেই কারণেই এতদিন র্যন্ত তাদের ছবি পর্যন্ত তোলা যায়নি। কিন্তু, পেরুতে যেভাবে জঙ্গল সাফ করা শুরু হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র খাবার ও আশ্রয় খুঁজছে।