
ঢাকা: জোটের জটে জর্জরিত বাংলাদেশের রাজনীতি। জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশের দিন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, বামপন্থী কিংবা ডানপন্থী নয়, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে তৈরি হওয়া নতুন দলের রাজনীতি হবে মধ্যপন্থী। কিন্তু নির্বাচনের ডঙ্কা বাজতেই ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ’ হয়েছে বলে অভিযোগ একাংশের। জামায়াতের সঙ্গে নাহিদ ইসলামের দল নাম লেখাতেই সরে দাঁড়াচ্ছেন একের পর এক পরিচিত মুখ। প্রথমে তানভির, তারপর তাজনুভা এবং এখন আবার মাহফুজ আলমও। সরে দাঁড়িয়েছেন মনিরাও।
রবিবার বিকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠক থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ও কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ লিবারল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি জামায়াতের সঙ্গে জোট তৈরি করছে।’ তবে নির্বাচনী সমঝোতা পাকা হয়ে গেলেও, চূড়ান্ত হয়নি আসন সমঝোতা। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ আসনে সমঝোতার পথে হাঁটছে দলগুলি। তবে এই সংখ্যা এখনও সম্পূর্ণ ভাবে নির্ধারিত হয়নি।
জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পরই এনসিপি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন একের পর এক পরিচিত মুখ। শনিবার এনসিপি ছেড়ে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মহিলা নেত্রী তথা চিকিৎসক তাসনিম জ়ারা। বলে রাখা প্রয়োজন, তাসনিমকে ঢাকা-৯ (খিলগাঁও, মুগদা) প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করেছিল এনসিপি। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে চলমান সমঝোতা আলোচনার দিকে আঙুল তুলে দল থেকে পদত্যাগ করেন তাসনিম।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তাসনিমের পথেই হাঁটেন এনসিপি-র যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন। নিজের সমাজমাধ্যমেই সেই কথা জানান তাজনুভা। তিনি বলেন, ‘অত্য়ন্ত কষ্টের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। দল থেকেও পদত্য়াগ করেছি।’ জামায়তের জোট নিয়ে আপত্তি তাঁর। গোটা ব্যাপারটাই ‘পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল’ বলে দাগিয়েছেন তিনি।
তাজনুভার মতোই রবিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে নওগাঁ-৫ আসনের এনসিপি প্রার্থী মনিরা শারমিন। তাঁর অভিযোগ, ‘ভরসা ছিল মধ্যপন্থী রাজনীতির প্রতি। কিন্তু এখন দলের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। তবে আমি প্রতিশ্রুতি ভাঙিনি। দল থেকে পদত্যাগের কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’ এনসিপির সঙ্গে ‘সম্পর্কচ্ছেদের’ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম বামপন্থী মুখ আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি আজাদ খান ভাসানী।
বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের ‘সাফল্যের’ পর নিউইয়র্কে এই মাহফুজ আলমকে পাশে দাঁড় করিয়ে ইউনূস বলেছিলেন ‘ব্রেইন বিহাইন্ড দ্য হোল থিং’। এক কথায়, ‘অভ্য়ুত্থানের কারিগর’। উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জন্য সম্প্রতিই সেই উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহফুজ। স্বাভাবিক ভাবেই এনসিপি-তে যাবেন বলেই নিশ্চয়তা ছিল। তিনি ময়দানে নেমে রাজনীতি করেননি। কিন্তু একাংশের মতে, মাহফুজ ছাড়া এনসিপি গঠন সম্ভব হত না। রবিবার জামায়াত-এনসিপি জোট গড়তেই যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাহফুজ। নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি এই এনসিপির অংশ হচ্ছি না।’