কিয়েভ: ১১ দিন কেটে গেলেও যুদ্ধ থামার ইঙ্গিত নেই ইউক্রেন-রাশিয়ার (Ukraine-Russia Conflict) মধ্যে। তবে মুড়ি-মুড়কির মতো গোলাবর্ষণের থেকেও চিন্তা বাড়ছে অন্য একটি বিষয় নিয়েই। চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেন তথা ইউরোপের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ়াপরঝিয়ার উপরে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আগুন লেগে যায় ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পরমাণু বিদ্য়ুৎ কেন্দ্রের (Nuclear Power plant) দখল করে নেয় রুশ সেনা। এরপরই গোটা বিশ্বে পরমাণু হামলার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেকোনও মুহূর্তেই ইউক্রেনের উপরে পারমাণবিক হামলা (Nuclear Attack) চালাতে পারে রাশিয়া, এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy)। এদিন সকালেই আবার কানিভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে রুশ সেনা। তবে কি সত্যিই পরমাণু হামলা চালাবে রাশিয়া?
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের উপরে সামরিক অভিযান শুরু করার কথা ঘোষণা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপরই ইউক্রেনের সীমান্ত পার করে দেশের অন্দরে ঢুকে পড়ে রুশ সেনা। যুদ্ধের প্রথম দিনেই তারা চেরোনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের দখল নেয়। সেই সময়ই আঁচ করা গিয়েছিল যে সামরিক অভিযানের পিছনে রাশিয়ার অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের জ়াপরঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রুশ মিসাইলের আঘাতে বিস্ফোরণ হয় এবং প্ল্যান্টে আগুন ধরে যায়। তারপর থেকেই গোটা এলাকার তেজস্ক্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। ওই প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ হলে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ ও হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে কূটনৈতিক আলোচনার পরামর্শ দেয়।
এদিকে, শনিবারই কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্ট সংবাদসংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, জ়াপোরঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনর্দখল করে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আজই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, কানিভ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে নিতে চাইছে রুশ সেনা। কিয়েভ থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে লক্ষ্য করেই এগোতে শুরু করেছে। এদিন সকালেই ইউক্রেনের আকাশে টিইউ-২২ পরমাণু বোমারু বিমানেরও দেখা মিলেছে। ফলে হামলার আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
ইউক্রেনের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র না থাকলেও, তাদের মোট বিদ্যুতের ৭৫ শতাংশই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি থেকে আসে। জ়াপরঝিয়া সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ৪টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। ১৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই দেশের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হয়। এছাড়া চেরোনোবিল পরমাণু কেন্দ্র এখনও তেজস্ক্রিয় রয়েছে। ফলে রাশিয়া যদি এই পরমাণু কেন্দ্রগুলির দখল নিয়ে নেয়, তবে একদিকে যেমন ইউক্রেনের বিদ্যুৎ পরিষেবা সহজেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া যাবে, তেমনই আবার পরমাণু হামলার জন্যও রাশিয়াকে আলাদাভাবে নিজেদের দেশ থেকে পরমাণু অস্ত্র বহন করে আনতে হবে না। ইউক্রেনের মাটিতে বসেই হামলা চালানো যাবে।
পরমাণু বিস্ফোরণ হলে প্রথমেই আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকার অক্সিজেন শুষে যাবে। ফলে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। পরমাণু আক্রমণের সবথেকে ভয়াবহ প্রভাব হল তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে থেকে যায়। পরমাণু বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু ছাড়াও ক্যান্সার, বিকলাঙ্গতা, বন্ধ্যা হয়ে যাওয়া, অন্ধ, শ্রবণ শক্তি হারানোর মতো রোগও হতে পারে।