মস্কো: এলজিবিটি আন্দোলনকে দেশ থেকে সমূলে দূর করতে আরও এক বড় পদক্ষেপ রাশিয়ার। এলজিবিটি আন্দোলনকারীদের ‘চরমপন্থী’ হিসাবে বিবেচনা করার সুপারিশ করল রুশ সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রুশ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি সামাজিক আন্দোলন’ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে রুশ বিচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই অনুরোধ সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে। গত কয়েক মাসে, রাশিয়ায় যৌন পছন্দ এবং লিঙ্গ পরিচয়ের প্রকাশের উপর প্রশাসনের মুঠি ক্রমে শক্ত হয়েছে। ‘অপ্রথাগত’ যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে। আইনি বা চিকিৎসাগতভাবে লিঙ্গ পরিবর্তনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রুশ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এই রায়, সেই ধারাবাহিকতারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপের ফলে, রাশিয়ায় সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের ধরপাকড় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের প্রধান ভলকার তুর্ক, অবিলম্বে রাশিয়ায় মানবাধিকার কর্মীদের কাজের উপর অনুপযুক্ত বিধিনিষেধ জারি বা এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতি বৈষম্যকারী আইনগুলি বাতিল করার ডাক দিয়েছেন। তবে, তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, এই বিষয়ে পুতিন প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আর রাশিয়ায় পুতিনই শেষ কথা। আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই অবশ্য ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ক্রেমলিনের এই মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই। তাই এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না।
তবে, রাশিয়ার বিচার মন্ত্রকই গত ১৭ নভেম্বর এলজিবিটি আন্দোলন নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, বহু রুশ পুরুষ যুদ্ধে যোগদান এড়াতে লিঙ্গ পরিবর্তনের পথ বেছে নিচ্ছেন বলেই, পুতিন প্রশাসন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু, এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে ভ্লাদিমির পুতিনের অন্য পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী মার্চ মাসেই তিনি আরও ছয় বছরের মেয়াদে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার দাবি জানাবেন। তার আগে তিনি নিজেকে পশ্চিমা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঐতিহ্যগত নৈতিক মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। আর সেই লক্ষ্যেই এই সকল পদক্ষেপ। গত বছরই তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে পশ্চিমীরা অদ্ভুত। তারা কয়েক ডজন লিঙ্গ এবং সমকামীদের কুচকাওয়াজের মতো নতুন প্রবণতা গ্রহণ করতেই পারে। তবে, সেগুলি অন্য দেশের উপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই।”
স্বাভাবিকভাবেই এলজিবিটি কর্মীরা এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট। তবে, সাধারণ রুশ জনতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ যেমন বলেছেন, মানুষ যাকে ইচ্ছে তাকে ভালবাসতে পারে। কাউকে প্রেম করতে নিষেধ করাটা অত্য়ন্ত বেদনাদায়ক। আবার অনেকেই বলেছেন, সমকামী সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। তাদের মতে, রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সমকামিতার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তাই এটা তাদের দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। রাশিয়ায় ইতিমধ্যেই ১০০টিরও বেশি গোষ্ঠীকে ‘চরমপন্থী’ হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই তালিকায় বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। এবার সেই তালিকায় এলজিবিটি আন্দোলন কর্মীরাও যুক্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানিয়েছেন, রাশিয়ায় এলবিজিটি সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। তিনি বলেন, “এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্য এর অর্থ হল তাদের মৌলিক অধিকার আরও খর্ব হওয়া।”