Afghanistan Taliban: স্কুলে যাওয়ায় তালিবানি ফতোয়া, বেশি বয়সের ছেলের সঙ্গেও কিশোরী মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন বাবা
Taliban: আফগানিস্তান একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার খর্ব করে রাখা হয়েছে।
কাবুল: ১৩ বছরের মেয়ে। বাড়িতে বিয়ের আয়োজন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। বারবারই বাবার কাছে আর্জি জানিয়েছে, আরও পড়াশোনা করতে চায় সে। এখনই যেন তাকে বিয়ে না দিয়ে দেয়। কিন্তু বাবা কোন সাহসে মেয়েকে ঘরে রাখবেন? কাল হয়ত অন্য তালিবানি ফতোয়া জারি হয়ে যাবে। কিশোরী মেয়েকে ঘরে রাখাও হয়ত বা অপরাধ হয়ে দাঁড়াবে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে। তাই এখন কিশোরী মেয়েদের পাত্রস্থ করেই শান্তি পেতে চাইছেন মেয়ের বাবারা। সেই পাত্র আবার মেয়ের বয়সের থেকে অন্তত ১৭ বছরের বড়।
আফগানিস্তানে ক্ষমতা কায়েম করার পর থেকেই উদ্বেগ, আতঙ্কে সে দেশের পরিবারগুলি। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় সায় নেই তালিবানের। জানিয়ে দিয়েছে, উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়েদের স্কুলে যাওয়া চলবে না। তাই মেয়ের বাবারা চাইছেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে।
শীতকাল এলেই স্কুলের জন্য শীত পোশাক কেনার হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মেয়েদের। নতুন স্কুল ইউনিফর্মের জন্য দোকানে দোকানে ভিড় জমায় পড়ুয়ারা। এবার স্কুল ড্রেসের বদলে দর্জির দোকানে বিয়ের পোশাকের জন্য লম্বা লাইন মেয়েদের।
গত অগস্টে তালিবানের দখলে চলে যায় আফগানিস্তান। সেই থেকে ঘরবন্দি বছর ১৩’র জইনাব। বিয়ের কথা শুনে বাবার কাছে খুব কেঁদেছিল সে। বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, এখনই যেন বিয়েটা না দিয়ে দেয়। ও চেয়েছিল, আরেকটু অপেক্ষা করতে, যদি তালিবানদের মন ঘোরে। যদি মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় অনুমতি দিয়ে দেয়।
কিন্তু বাবা সেসব কথা শুনতে চাননি। বরং বাবার দৃঢ় বিশ্বাস, তা কখনওই হবে না। তাই মেয়ের জন্য ১৭ বছরের বড় এক পাত্র ঠিক করেন। মেয়েকে বোঝান, বিয়ে করলেই বিপদ টলানো সম্ভব। জইনাবকে যেদিন পাত্রপক্ষ দেখতে আসে, কিছু ভেড়া, ছাগল ও চার বস্তা চাল এনেছিল। শতাব্দী প্রাচীন রেওয়াজ সে দেশে।
মেয়ের বাড়িতে বিয়ের কথা পাড়তে এলে ছেলের বাড়ি থেকে এসব যৌতূক নিয়ে যায়। এক ঘণ্টার মধ্যে পাকা কথাও দিয়ে ফেলে ছেলের বাড়ির লোকেরা। বিয়ে হয়ে গিয়েছে জইনাবের। এখন স্বামীর ঘরই তার জগৎ। জইনাব এক আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছে, “আমার কথা কেউ জানতেই চায়নি। আমাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিল।”
তালিবানের শাসনে এমনটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে সে দেশে। সবথেকে কষ্টে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো। জইনাবের কথায়, “আমি বাবার বাড়িতে দেরি করে ঘুম থেকে উঠতাম। কাজও তো সবই মা করতেন। এখানে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলেই সকলে বকাবকি করেন। কথা শোনায়, ‘তোমার পিছনে এত খরচ করছি, তুমি তো দেখছি কোনও কাজেরই নও’।”
হেরাটের শিক্ষক সংগঠনের মাথা মহম্মদ মাশাল। তাঁর কথায়, বাবা মা ভাবতে শুরু করেছেন আফগানিস্তানে মেয়েদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তাঁরা ভাবছেন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়াই নিরাপদ। আফগানিস্তান একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার অধিকার খর্ব করে রাখা হয়েছে। যদিও এমনও শোনা যাচ্ছে, এই নির্দেশ নাকি সাময়িক। আগামী মার্চ মাস থেকে মেয়েদের পড়াশোনায় ফের অনুমতি দেওয়ার ভাবনাচিন্তা রয়েছে তালিব সরকারের। আদৌ তা হবে কি না তা কেউ জানে না। আর হলেও ততদিনে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। বহু কিশোরীর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় যে হারিয়েই গেল!