নয়া দিল্লি: পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডারে পাকিস্তানকে ছাপিয়ে গেল ভারত। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা ‘সিপ্রি’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কাছে ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে দুটি কম। ১৯৯৯ সালের পর থেকে, অর্থাৎ, গত ২৫ বছর ধরে পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যায় ভারতের থেকে এগিয়ে ছিল পাকিস্তান। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সময় ভারতের হাতে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল মাত্র ১০০টি। তারপর থেকে পারমাণবিক অস্ত্রাগার শক্তিশালী করার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে চলেছে ভারত সরকার। যার ফলে, ২০১৪-র পর থেকে ভারতের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সেটাই এবার ধরা পড়ল ‘সিপ্রি’-র প্রতিবেদনে।
সাধারণত, শান্তির সময়ে ভারতের সমস্ত ওয়ারহেডই, তাদের লঞ্চারগুলি থেকে আলাদা করে রাখা থাকে। তবে, ‘সিপ্রি’-র প্রতিবেদন বলছে, ভারত এই কৌশল পরিবর্তন করছে। এক নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। বেশ কয়েকটি ওয়ারহেডকে, তাদের ডেলিভারি সিস্টেমগুলির সঙ্গে সম্মিলিত অবস্থায় রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত ক্যানিস্টারে ক্ষেপণাস্ত্র রাখা শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সমুদ্রে প্রতিরোধমূলক টহলদারি পরিচালনা করছে। ভারতের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি এই নয়া কৌশল অবলম্বনের ইঙ্গিতবাহী। যুদ্ধবিমান, স্থল-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মাধ্যমে ভারত পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে।
২০২৩-এ ভারতের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল ১৬৪। অর্থাৎ, গত এক বছরে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রাগারে আরও আটটি নতুন ওয়ারহেড যোগ করেছে। তবে, একই সময়ে পাকিস্তানের হাতে থাকা পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা বাড়েনি। ২০২৩-এও তাদের পারমাণবিক অস্ত্রর সংখ্যা ১৭০-ই ছিল। সিপ্রি-র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের অস্ত্রগুলি মূলত পাকিস্তানকে মোকাবিলার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। তবে চিনের যাতে সমস্ত জায়গায় হামলা চালানো যায়, সেই কথা মাথায় রেখে এখন দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তবে, বর্তমানে গোটা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে দ্রুত গতিতে পারমাণবিক অস্ত্রাগার বাড়াচ্ছে যে দেশ, তারা হল চিন। ২০২৩-এ তাদের পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল ৪১০। এক বছরের মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে ৫০০। ভারতের মতোই শান্তির সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণের বিষয়ে নীতি বদল করতে চলেছে চিনও। সিপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেজিং-ও অল্প সংখ্যক পারমাণবিক ওয়ারহেড, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রে মোতায়েন করতে পারে। সমস্ত পারমাণবিক অস্ত্রগুলিকেই ‘হাই অপারেশনাল অ্যালার্টে’র আওতায় রেখেছে বেজিং। অর্থাৎ, প্রয়োজন পড়লেই সেগুলিকে দ্রুত লঞ্চারের সঙ্গে একত্রিত করে নিক্ষেপ করা যাবে। ভারতের মতো পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে চিনের হাতেও।
‘সিপ্রি’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবথেকে বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার হাতে, ৪৩৮০টি। ৩৭০৮টি পারমাণবিক ওয়ারহেড নিয়ে এই তালিকায় দুই নম্বরে রয়েছে আমেরিকা। পরমাণু অস্ত্র রয়েছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, উত্তর কোরিয়া এবং ইজরায়েলের হাতেও।