
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত বছরের জুলাইয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই আন্দোলনের ফলে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দেশও ছাড়েন তিনি। তারপর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। আর মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারে উপদেষ্টা হন আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রনেতারা। সেই ছাত্রনেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে কয়েকমাস আগে সরব হয়েছিলেন বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। হাদির মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সাংবাদিক বৈঠকে বলা তাঁর সেই কথাগুলি। কী বলেছিলেন তিনি?
জুলাই আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রদের একাংশ ও জাতীয় নাগরিক কমিটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) গঠন করে। এনসিপি-কে আক্রমণ করে ওই সাংবাদিক বৈঠকে হাদি বলেছিলেন, “এনসিপি-র তিনটি অপরাধ। প্রথমত, সে জুলাই আন্দোলনকে কুক্ষিগত করেছে। ঠিক যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামি লীগ কুক্ষিগত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ সবাই করেছে। আপামর জনগণ করেছে। কিন্তু, আওয়ামি লীগ এসে বলল, আমি যুদ্ধের মালিক।”
এরপরই হাদি বলেন, “জুলাইকে কুক্ষিগত করার ফলে এনসিপি দ্বিতীয় যে কাজটা করেছে, তাদের অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই কথাটা বলতে গিয়ে কষ্ট হয়। দশ মাস আগে যে ছেলেটার সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি, সেইসব ছেলেমেয়ে মাত্র ৮-১০ মাসের মধ্যে কীভাবে কোটি টাকার মালিক হয়, সেই চিন্তায় আমাদেরও ঘুম আসে না।”
বাংলাদেশে ক্ষমতা বদলের পর ছাত্রনেতাদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলে হাদি বলেছিলেন, “রাজনীতি তো ৫ বছরের নয়। রাজনীতি তো ৫০ বছরের। কষ্ট করে বসে থাকলে আগামী বাংলাদেশ হত আমাদের। জুলাই যোদ্ধাদের। কিন্তু, এখন তারা যে দুর্নীতি করল, এই সরকার পড়ে গেলে ওইসব ছেলেমেয়ে চলে যাবে দুবাই। যারা ওখানে ফ্ল্যাট কিনেছে। ওখানে ব্যবসা করছে। কেউ অন্য় দেশে চলে যাবে। কিন্তু, এই লক্ষ লক্ষ জুলাই জনতা কোথায় যাবে? আমাদের যে তোমরা এই জাহান্নামে ফেলে যাবে, এর জবাব কিন্তু ইতিহাসের কাছে দিতে হবে।”
NCP-কে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনের এই ঐক্য নষ্ট করেছে এনসিপি। উপদেষ্টারা মনে হলেই পোস্ট করে। তারপর ডিলিট করে। আবার তিন ঘণ্টা পর এসে দুঃখপ্রকাশ করে। এটা কি বাচ্চাদের খেলা? আবেগপ্রবণ, অভিমানী বালক হলে নাটক করো, সিনেমা করো, আর্ট-কালচার করো, উপদেষ্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কে নিতে বলেছে? আমরা এর সমালোচনা করতেই ফুঁসে উঠল অনেকে। তখন বললাম, ভাই উনি বিদেশ চলে যাবেন। তোমরা যারা দেশে থাকবে, তোমাদের মানুষ ভালবাসে। ভাইয়ের রাজনীতি করতে গিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে যেও না।”
ওই সাংবাদিক বৈঠকে বিএনপি-কে আক্রমণ করেছিলেন হাদি। বলেছিলেন, “কীভাবে জেন জি আপনাদের সঙ্গে একাত্ম হবে। বিএনপি-র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, যিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেতা, তিনি বললেন, বিএনপি-র যত কর্মী আছে, সবাই প্রস্রাব করলে নাকি অন্যরা ভেসে যাবে। আপনাকে বলি, গত ১৬ বছরে আপনাকে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছিল কে? গত ১৬ বছর আপনি প্রস্রাব করেননি কেন? বিএনপি, জামাত-ই-ইসলামির মুরুব্বিদের মুখে সেলোটেপ মারুন। পিছনের সারিতে বসিয়ে রাখুন। এই আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের বয়স ২১ থেকে ৩৫ বছর। বিএনপি, জামাত-ই-ইসলামির সকলে তরুণদের সামনে আনুন। এই মুরুব্বিরা কী কথা বলেন? আওয়ামি লীগের কেউ প্রস্রাবের কথা বললে আমরা জিভ ছিঁড়ে ফেলতাম।”