কাবুল: যত দিন পেরোচ্ছে, ততই কঠোর হচ্ছে তালিবানের নিয়ম (Taliban Rule)। বিশেষ করে মহিলাদের প্রায় সমস্ত অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা থেকে পোশাক পরার অধিকার, সবকিছুতেই কাঁচি চালিয়েছে তালিবান। এবার আফগানিস্তানের মহিলাদের (Afghan Women) ব্যক্তিগত জীবনের অধিকারেও হস্তক্ষেপ করল। তালিবান সরকারের তরফে জানানো হল, এবার থেকে আর মহিলাদের জন্য গর্ভনিরোধক ওষুধ (Contraceptives) বিক্রি করা যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞার পিছনে যুক্তিও দিয়েছে তালিব প্রশাসন। তাদের দাবি, মুসলিমদের জনসংখ্য়া নিয়ন্ত্রণের (Population Control) জন্য এটা পশ্চিমী দুনিয়ার ষড়যন্ত্র। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা মহিলাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে যে তারা যেন গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহার না করেন। ওষুধের ব্যবসায়ী ও দোকানীদেরও সতর্ক করা হয়েছে গর্ভনিরোধক ওষুধ বা অন্য কোনও বস্তু যেন বিক্রি না করা হয়।
দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তানের দুটি প্রধান শহরে ইতিমধ্যেই গর্ভনিরোধক ওষুধ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তালিবান সরকারের প্রতিনিধিরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের সতর্ক করছেন, তারা যেন গর্ভনিরোধক ওষুধ বা অন্য কোনও বস্তু ব্যবহার না করেন। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালিবানের তরফে জানানো হয়েছিল, ৯০-র দশকের মতো শাসন করবেন না তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও পরিবর্তিত হয়েছেন। শরিয়া আইন মেনেই দেশ শাসন করা হবে। তবে এই প্রতিশ্রুতি কেবল মুখেই ছিল। ক্ষমতা দখলের কয়েক মাসের মধ্যেই তালিবান শাসক মহিলাদের উচ্চশিক্ষার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বন্ধ করে দেওয়া হয় মহিলাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। অধিকাংশ চাকরি থেকেই মহিলাদের বের করে দেওয়া হয়েছে, এমনকী বাড়ি থেকে একা বেরোনোর উপরেও বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। গর্ভনিরোধক ওষুধের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা এই তালিকায় নয়াল সংযোজন।
কাবুলের এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, “ওরা (তালিবান) দুইবার আমার দোকানে বন্দুক নিয়ে এসেছে এবং হুমকি দিয়েছে যে আমি যেন গর্ভনিরোধক ওষুধ না রাখি বা বিক্রি করি। তালিবান শাসকরা নিয়মিত কাবুলের প্রত্যেকটি ওষুধের দোকানে যাচ্ছে এবং যাচাই করছে যে গর্ভনিরোধক ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে কিনা। ভয়ে আমরাও আর ওই ওষুধ বিক্রি করছি না।”
এক আফগান মহিলা জানান, তাঁর বাড়িতে এসে তালিবান কম্যান্ডার বলে গিয়েছেন যে মহিলারা যেন বাড়ির বাইরে না বের হন এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিমী রীতিনীতির প্রচার যেন না করেন। চলতি মাসের শুরু থেকেই গর্ভনিরোধক ওষুধ ও ডেপো-প্রোভোরা ইঞ্জেকশন দোকানে রাখা এবং বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দোকানে স্টকে যে ওষুধ আছে, তাও বিক্রি করা হচ্ছে না।