কাবুল: কোনও কথা শোনা হবে না, যা নির্দেশ দেওয়া হবে, তাই-ই মানতে হবে। আফগান মহিলাদের এ কথা সাফ জানিয়ে দিল তালিবান সরকার। গত সপ্তাহেই আফগানিস্তানের শাসক তালিবান গোষ্ঠীর তরফে জানানো হয়, শুধু সাধারণ মহিলারাই নয়, সংবাদমাধ্যমে যে সমস্ত সঞ্চালিকা বা সংবাদপাঠিকা রয়েছেন, তাদের অন-এয়ার শোতেও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। প্রথমে এক-দু’টি সংবাদমাধ্যম এই নির্দেশিকা অনুসরণ করলেও, বেঁকে বসেন সংবাদ পাঠিকারা। তাঁরা তালিবানের এই নিয়ম মানতে অস্বীকার করেন। রবিবার তালিবান শাসকদের তরফে ফের জানানো হয় যে, মহিলা সংবাদ পাঠকদের অন-এয়ার শো চলাকালীন অবশ্যই মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এতে কোনও পরিবর্তন আনা হবে না। নির্দেশ অমান্য করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে, তা বলাই বাহুল্য।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারই তালিবান সরকারের পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয় যে, দেশের সমস্ত সংবাদপাঠিকাদের শো চলাকালীন বোরখা পরে থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয় বলেই জানানো হয়। ফতোয়া জারির পর হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদসংস্থার সংবাদপাঠিকারাই এই নিয়ম অনুসরণ করেন। বাকিরা এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন। তাঁদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলেই জানান।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সংবাদমাধ্যমগুলি এই নির্দেশ মানছিল না, রবিবার তাদের জোর করে নির্দেশ মানতে বাধ্য করা হয় এবং সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এটা আলোচ্য বিষয় নয়, সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যদি ফতোয়া না মানা হয়, তার পরিণতি ভাল হবে না বলেও জানিয়েছেন তালিবান শাসক।
এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল অবধি আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা যখন তালিবানের হাতে ছিল, সেই সময় মহিলাদের উপরে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বোরখা পরা থেকে শুরু করে শিক্ষা, সাধারণ সমাজ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। এরপরে গত বছর অগস্ট মাসে যখন ফের একবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালিবান, সেই সময় তারা জানিয়েছিল, আধুনিক সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই শরিয়া আইন জারি করা হবে। নারী স্বাধীনতা ও সুরক্ষারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পার হতেই নতুন নতুন ফতোয়া জারি করা হয়।
চলতি মাসের শুরুতে তালিবান সরকারের তরফে জানানো হয়, বাড়ির বাইরে বেরলেই সমস্ত মহিলাদের বোরখা পরে বের হতে হবে। তাঁরা একা বেরতে পারবেন না, সঙ্গে অবশ্যই পুরুষসঙ্গী থাকতে হবে। যদি মহিলারা পোশাকবিধি না মানেন, তবে শাস্তি দেওয়া হবে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।