কাবুল: যাবতীয় জল্পনা সত্যি করে আফগানিস্তানের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তালিবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বরাদর। এমনটাই জানাচ্ছে সূত্র। খুব শীঘ্রই নতুন সরকার সে দেশে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ঝুঝতে থাকা আফগানিস্তানের আর্থিক পরিস্থিতি নতুন তালিবান সরকার উদ্ধার করতে পারে কিনা সে দিকেই নজর থাকছে গোটা আন্তর্জাতিক মহলের।
তালিবানি সরকারের প্রধান চালিকাশক্তি হবেন মূলত তিনজন। প্রথমজন মোল্লা বারাদার যিনি তালিবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান। এর পাশাপাশি থাকছেন তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব। সেই সঙ্গে সরকারের তৃতীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে চলেছেন শের মহম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। যিনি চলতি সপ্তাহেই কাতারের দোহা শহরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তালিবানের এক গোপন সূত্র জানিয়েছে, তালিবানের সমস্ত শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই কাবুল পৌঁছে গিয়েছেন। সেখানে আপাতত নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে যা খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা করা হবে। যদিও পৃথক একটি সূত্র জানাচ্ছে, তালিবানরা কান্দাহারকেই রাজধানী হিসেবে বেছে নিতে পারে।
অন্যদিকে, গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুলে দখল নিয়ে ফেললেও উত্তর আফগানিস্তানের নর্দান অ্যালায়েন্স তাদের এখনও পঞ্জশীর উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেয়নি। এই একমাত্র প্রদেশ যা এখনও তালিবান মুক্ত। তবে তালিবানিরাও পিছু হটছে না। বিগত কয়েকদিন ধরেই পঞ্জশীরের সীমান্তে তালিবানি এবং নর্দান অ্যালায়েন্স সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। নানা সূত্র মারফত উঠে এসেছে, সেই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই কয়েকশো তালিবানি যোদ্ধার মৃত্যু ঘটেছে। প্রাক্তন মুজাহিদীন কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে এই বাহিনী। উভয় পক্ষের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে অবশ্য একটা ফয়সালা আসার চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র বের করা যায়নি।
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে বন্দুকের নলের জোরে তালিবান ক্ষমতায় চলে গেলেও সরকার চালানো যে তাদের জন্য মোটেই সহজ হবে না সেটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। যার অন্যতম বড় কারণ হল আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মতো সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই সব ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে। একাধিক দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে আফগানিস্তানের। বিমানবন্দর বন্ধ। ফলে আর্থিক লেনদেন কী ভাবে হবে এবং আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে তালিবান কী ভাবে শক্ত পায়ে দাড় করাবে সেটাই এখন সবথেকে বড় চিন্তা এবং চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠেছে।
তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে শরীয়ত আইনের জটিলতা। মহিলাদের আদৌ কাজ করার বা শিক্ষা গ্রহণের অধিকার দেওয়া হবে কিনা, সেই নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট অবস্থান তালিবান জানাতে পারেনি। মুখে বলা হয়েছে এক, তারা কাজ করেছে আরেক। ফলে নতুন সরকার চালানো মোটেই ‘কেকওয়াক’ হবে না তালিবানের জন্য।