কাবুল: মুখে নারী শিক্ষা ও স্বাধীনতার কথা বললেও সরকারে মহিলাদের সামিল করতে রাজি নয় তালিবান। বৃহস্পতিবার তালিবানের এক মুখপাত্র সাফ জানিয়ে দিলেন, মহিলাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার কাজের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।
আশঙ্কা ছিল আগেই, গত ১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুল দখল নেওয়ার পরই আফগান মহিলারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ৯০-র দশকের মতোই তাদের ফের গৃহবন্দি থাকতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু তালিবানরা আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন, শরিয়া আইন মেনেই নারী সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
তবে মঙ্গলবার রাতে সরকার গঠনের ঘোষণা করার পরই দেখা যায়, মন্ত্রিসভায় কোনও মহিলা নেই। সমস্ত সরকারি পদেই স্থান পেয়েছেন কেবল পুরুষরাই। এরপরই প্রতিবাদে পথে নামেন আফগান মহিলারা। কাবুল, কান্দাহার, হেরাট সহ একাধিক জায়গায় সরকার বিরোধী মিছিল বের হয়।
মহিলাদের এই দাবি ও আন্দোলনের প্রসঙ্গেই বৃহস্পতিবার টোলো নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তালিবান মুখপাত্র সইদ জেকরুল্লাহ হাশিমি বলেন, “একজন মহিলা মন্ত্রী হতে পারেন না। যেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তা মহিলাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে না।”
তিনি আরও যোগ করে বলেন, “মন্ত্রিসভায় মহিলাদের থাকা আবশ্য়ক নয়, মহিলাদের সন্তানধারণের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।” দেশের বিভিন্ন স্থানে মহিলাদের যে মিছিল বের হচ্ছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কয়েকজন মহিলা আন্দোলনকারী গোটা আফগানিস্তানের মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না।”
দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পরই ভাল মানুষের মুখোশ ধরার চেষ্টা করছে তালিবান। বারংবার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আগের তালিবানের সঙ্গে তাদের বিস্তর ফারাক। মহিলাদের শিক্ষা ও কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হবে শরিয়া আইন মেনে।
তবে সরকার গঠনের কাজ শুরুর পর থেকেই একের পর এক ফতেয়ায় উল্টো চিত্রটাই ধরা পড়েছে। অধিকাংশ অফিস থেকেই মহিলা কর্মচারীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্য়ালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও নানা ফতেয়া জারি করা হয়। ফতেয়ায় বলা হয়েছে, মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে একই কক্ষে বসতে পারবেন না। স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনও পুরুষ সঙ্গীর তত্বাবধানেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন।
ছাত্রীদের জন্য আলাদা ক্লাসরুম ও মহিলা শিক্ষকের ব্যবস্থা করতেব হবে। যদি আলাদা ক্লাসরুমের ব্যবস্থা না করা যায়, তবে ১৫ জনের বেশি পড়ুয়া থাকলেও মাঝখানে পর্দা টাঙিয়ে দিতে হবে। মহিলাদের ক্লাসও ৫ মিনিট আগে শেষ করতে হবে, যাতে বেরনোর সময় পুরুষদের সঙ্গে দেখা না হয়। মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য আবায়া ও নিকাব পরতে হবে।
সাংস্কৃতিক কমিশনের ডেপুটি প্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিকও নয়া নির্দেশিকা ঘোষণা করে বলেছেন, “মহিলাদের খেলাধুলোর কোনও প্রয়োজন নেই। এতে শরীর প্রদর্শন হয়, যা আইন বিরুদ্ধ”।
মঙ্গলবারই বহু আফগান মহিলা সহ অন্তত ৭০ জন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ইসলামাবাদ তথা আইএসআই-এর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান যে হোটেলে ছিলেন, সেই সেরেনা হোটেলের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল মিছিল। এমন সময়ই আন্দোলনকারীদের সরাতে শূন্যে গুলি চালায় তালিবান। ঘটনায় এক শিশু সহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। বুধবারও মিছিলে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের খুঁজে বের করে বেত ও চাবুক দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: BRICS Summit: সন্ত্রাসবাদ রুখতে জোর সওয়াল মোদীর, আফগানিস্তানের দুর্দশায় আমেরিকাকেই দুষলেন পুতিন