দেশের নাম মুছে গিয়ে ঘোষিত হবে ‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান’, বদলে যাবে পতাকা
Taliban in Afganistan: ২০ বছর আগের স্মৃতি ঘুম ওড়াচ্ছে আফগানবাসীর। আবার ফিরবে সারিয়া আইন? আবার নরক দর্শন করবে আফগানি মহিলারা?
কাবুল: এত দ্রুত তালিবানের (Taliban) কবলে চলে যাবে কাবুল, তা ভাবেনি আমেরিকাও। হাতে মাস তিনেক সময় আছে ভেবেই কাবুল (Kabul) থেকে নাগরিকদের সরানোর কাজ চলছিল আমেরিকা (US)। কিন্তু সময় দিল না সন্ত্রাসবাদীরা। পেন্টাগনের ভবিষ্যদ্বাণীর ৩-৪ দিনের মধ্যেই আফগান রাজধানীতে ঢুকে পড়ল তালিবান। মাজার-ই-শরিফ, জালালাবাদ পেরিয়ে তালিবানের আয়ত্তে এখন কাবুল। সংবাদমাধ্যম ‘আল-জাজিরা’য় রবিবার রাতে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। আফগান প্রেসিডেন্টের ভবনে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তালিবানিরা। আফগানবাসীর মধ্যে ফিরছে ২০ বছর আগের দুঃস্বপ্ন। তালিবান সূত্রে খবর, খুব দ্রুত মুছে যাবে আফগানিস্তানের নাম। ঘোষিত হবে ‘ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তান (Islamic Emirate of Afganistan)।’
তালিবান সূত্রে খবর, তালিবান সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, শীঘ্রই আফগানিস্তানের নাম, দেশের পতাকা, দেশের আইন সবটাই বদলে যাবে। আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান’ বলে চিহ্নিত করবে তালিবান। শুধু তাই নয়, দেশের জাতীয় পতাকা বদলে যাবে, লাগানো হবে তালিবানের প্রতীক। তালিবানরা আবারও সারিয়া বা ইসলামিক আইন কায়েম করবে বলেও আশঙ্কা আফগানবাসীর। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি তালিবান শাসন চলাকালীনও জারি ছিল এই সারিয়া, যাতে মেয়েদের পোশাক থেকে শিক্ষা-সবকিছুতেই ফতেয়া জারি করা হয়েছিল। সামান্যতম অপরাধেও মিলত প্রাণদণ্ড।
শনিবারও আফগান প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানির মুখে শোনা গিয়েছিল অভয়বাণী। তালিবানের দখলে যখন ৯০ শতাংশ আফগানিস্তান, তখনও প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আফগানবাসীকে মরতে দেবেন না তিনি। অথচ কয়েক ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই ক্রমশ শেষ আশাটুকুও নিভে এল আফগানবাসীর। রবিবার প্রতি মুহূর্তে আফগানিস্তান থেকে এল আতঙ্কে খবর। সকালেই জালালাবাদ দখল, আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাবুলে পৌঁছে গেল সশস্ত্র তালিবানিরা। সূত্রের খবর, দুপুরেই দেশ ছেড়ে চলে যান আসরাফ ঘানি। তারপর থেকেই রাজধানী জুড়ে তালিবানের বিজয়োল্লাস।
যে মুহূর্তে ঘানির চলে যাওয়ার খবর পৌঁছয় তালিবানের কানে, সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গা থেকে আফগান সেনাকে সরাতে উদ্যত হয় জঙ্গিরা। তবে সন্ত্রস্ত আফগানবাসীকে আশ্বস্ত করছে তালিবান। তাদের দাবি, কাউকে দেশ ছেড়ে যেতে হবে না। তারা চায় সবাই দেশে থেকে সহযোগিতা করুক। সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে তালিবান মুখপাত্র বলেন, ‘কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না। আমাদের প্রত্যেককে দরকার।’ ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনিখ শহরে যাতে কোনও লুটপাঠ, হানাহানি না হয়, সে দিকে খোল রাখতে বলা হয়েছে সংগঠনের সদস্যদের।
তবে মুখে যতই আশ্বাসের বার্তা থাক তালবানকে বিশ্বাস করতে পারছে না আফগানবাসী। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বিয়ে করা বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাব, এ সব নতুন নয় তালিবানু শাসনে। ২০ বছর আগের কথা কী করে ভুলে যাবে তারা? তাই অধিকাংশ বাসিন্দা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। পথেঘাটে সাধারণ মানুষের হুড়োহুড়ি চোখের পড়ার মতোই। তালিবানদের দখলে সমস্ত সীমান্ত চলে যাওয়ায় পালানোর একমাত্র রাস্তা বর্তমানে একটাই, কাবুল বিমানবন্দর। সেখানে ক্রমশ বাড়ছে ভিড়। আরও পড়ুন: দূতাবাস থেকে নামল মার্কিন পতাকা, আটকে পড়া বাসিন্দাদের ফেরাতে আরও সেনা পাঠাচ্ছে বাইডেন