দূতাবাস থেকে নামল মার্কিন পতাকা, আটকে পড়া বাসিন্দাদের ফেরাতে আরও সেনা পাঠাচ্ছে বাইডেন

শনিবারই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন যে, আফগানিস্তানের মার্কিন কূটনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধার করতে তিন হাজারের বদলে পাঁচ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে। যদি তালিবানরা এই কাজে কোনও প্রকার বাধা সৃষ্টি করে, তবে ফল ভাল হবে না।

দূতাবাস থেকে নামল মার্কিন পতাকা, আটকে পড়া বাসিন্দাদের ফেরাতে আরও সেনা পাঠাচ্ছে বাইডেন
কাবুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে মার্কিন সেনা। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2021 | 7:53 AM

ওয়াশিংটন: সেনা প্রত্যাহার শুরু হতেই নখ-দাঁত বের করতে শুরু করেছিল তালিবানরা (Taliban)। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন। ফলস্বরূপ কার্যত এক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানের (Afghanistan) সবকটি বড় শহর দখল করে নিল তালিবানরা। সে দেশে আটকে থাকা মার্কিন নাগরিকের ফেরাতে আরও এক হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

রবিবারই মার্কিন সেনার এক আধিকারিক জানান, অতিরিক্ত এক হাজার সেনা কাবুলে পাঠানো হচ্ছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি মাথায় রেখে কুয়েতে না থেমেই সরাসরি কাবুলে পাঠানো হচ্ছে ওই সেনাবাহিনীকে। এই নিয়ে আফগানিস্তানে মোট ছয় হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকছে।

গত সপ্তাহেই যখন কান্দাহার, হেরাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি তালিবানদের দখলে চলে যাচ্ছিল, সেই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে বলেছিলেন, “আফগান নেতাদের একজোট হতেই হবে। আফগান সেনার সংখ্যা তালিবানদের তুলনায় অনেক বেশি এবং তাদের নিজেদের ও দেশের জন্য লড়াই চালাতেই হবে।”

সেনা প্রত্যাহার প্রসঙ্গেও তিনি জানিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। বিগত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েনের জন্য প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, কয়েক হাজার সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন। পূর্ব প্রেসিডেন্টের করা চুক্তি বজায় রেখেই সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে আমেরিকার তরফে আকাশপথে সহায়তা, খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা জারি রাখা হবে।

বাইডেনের দাবি, ২০০১ সালে আল কায়েদা হামলার পর সেই সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে দমনের যে লক্ষ্য স্থির করেছিল আমেরিকা, তা বহুদিন আগেই পূরণ হয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি আফগান সেনাকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এ বার নিজেদের লড়াই তাদেরই লড়তে হবে।

যদিও বাইডেনের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে মার্কিন কূটনৈতিকরাও। তাদের কথায়, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল প্রেসিডেন্টের। রিপাবলিকান সেনেট মিচ ম্যাককনেল বলেন, “বাইডেন বুঝেশুনেই বড়সড় বিপর্যয়ের অনুমতি দিয়েছে। তিনি চাইলেই এই বিপর্যয় এড়ানো যেত।” অন্যদিকে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করেন এবং বাইডেনকে কটাক্ষ করে আমেরিকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আমায় মিস করছেন?”

শনিবারই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন যে, আফগানিস্তানের মার্কিন কূটনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধার করতে তিন হাজারের বদলে পাঁচ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে। যদি তালিবানরা এই কাজে কোনও প্রকার বাধা সৃষ্টি করে, তবে ফল ভাল হবে না। এরপরই রবিবার পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আরও এক হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

এ দিকে, গতকালই কাবুলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। দূতাবাসে যে সমস্ত মার্কিন আধিকারিক আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের উদ্ধার করে বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে দূতাবাসের ছাদেই হেলিকপ্টার নামানো হয়।  এক মার্কিন আধিকারিক জানান, উদ্ধারকার্য় শুরু হতেই মার্কিন দূতাবাস থেকে পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় নথিও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বাকি নথি নিয়ে দেশে ফিরছে মার্কিন নাগরিক ও সেনাবাহিনী।

গতকালই ন্যাটো বাহিনীর তরফেও জানানো হয়, কাবুল বিমানবন্দরের মাধ্যমেই আপাতত গোটা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে আফগানিস্তান। বাকি দেশগুলির নাগরিকদের ফেরানোর কাজও এই বিমানবন্দরের মাধ্যমেই চলছে। তাই বিমানবন্দর সুরক্ষার দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ন্যাটো। আরও পড়ুন: একবেলাতেই মুঠোয় গোটা দেশ, ভয়ে সিঁটিয়ে আফগানবাসী, এ বার কী করতে চলেছে তালিবান?