একবেলাতেই মুঠোয় গোটা দেশ, ভয়ে সিঁটিয়ে আফগানবাসী, এ বার কী করতে চলেছে তালিবান?

তালিবানদের হাতে দেশের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরই আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। তালিবানরা নরম সুর শোনালেও দু'দশক আগের স্মৃতিই উসকে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বিয়ে করা বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাব। খাবার তো দূরের কথা, আতঙ্কের দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না আফগান বাসিন্দারা।

একবেলাতেই মুঠোয় গোটা দেশ, ভয়ে সিঁটিয়ে আফগানবাসী, এ বার কী করতে চলেছে তালিবান?
কান্দাহারে নজরদারি তালিবানিদের। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2021 | 7:18 AM

কাবুল: পেন্টাগনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ৯০ দিন অবধি সুরক্ষিত থাকবে কাবুল (Kabul)। কিন্তু ৯ দিনও সুরক্ষিত থাকল না আফগান রাজধানী, ৪ দিনেই তালিবানিদের দখলে চলে গেল গোটা দেশ। সূত্রের খবর, ভয়ে পদত্য়াগ করেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি (Ashraf Ghani)। আপাতত শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষেই তালিবানরা (Taliban)। কিন্তু তারপর? কী লেখা আছে আফগানিস্তানের (Afghanistan) বাসিন্দাদের কপালে?

রবিবার বিকেলের মধ্যেই সম্পূর্ণ কাবুল দখলের খবর মেলে। তালিবান প্রতিনিধিরা পৌঁছে যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে, দখল নেওয়া হয় ক্ষমতার। শেষ খবর পাওয়া অবধি আফগান প্রশাসনের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। তালিবান কম্যান্ডারদের তরফে কাবুলের ক্ষমতা নেওয়া কথা জানানো হলেও বিদায়ী আফগানিস্তান সরকার সরকারের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

এ দিকে, তালিবানদের হাতে দেশের ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরই আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। তালিবানরা নরম সুর শোনালেও দু’দশক আগের স্মৃতিই উসকে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বিয়ে করা বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাব। খাবার তো দূরের কথা, আতঙ্কের দু চোখের পাতা এক করতে পারছেন না আফগান বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই যেখানে শান্তি চেয়ে তালিবানদের হাসি মুখে স্বাগত জানিয়েছে, সেখানেই অধিকাংশ বাসিন্দা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। পথেঘাটে সাধারণ মানুষের হুড়োহুড়ি চোখের পড়ার মতোই। তালিবানদের দখলে সমস্ত সীমান্ত চলে যাওয়ায় পালানোর একমাত্র রাস্তা বর্তমানে একটাই, কাবুল বিমানবন্দর।

তালিবান দখল নেওয়ার পরই পলাতক প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি। সরকারের একপক্ষের দাবি, তিনি তাজিকিস্তানের পালিয়েছেন, কারোর আবার দাবি, সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কোথায় গিয়েছেন, তা কাউকেই জানাননি। এ দিকে, তালিবানদের তরফেও ঘানির খোঁজ শুরু করা হয়েছে।

কীভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানানো না হলেও তালিবানদের দাবি, কোনও সমঝোতা নয়, সরকারকে পরাজয় স্বীকার করে শান্তিপূর্ণভাবে গোটা দেশের ক্ষমতাই হস্তান্তর করতে হবে। যতক্ষণ দুই পক্ষ এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছবে না, ততক্ষণ কাবুল সীমান্তের বাইরেই অপেক্ষা করবে তালিবান সেনা, এমনটাই জানিয়েছেন মুখপাত্র জাবিবুল্লাহ মুজাহিদ।

ক্ষমতায় এসে কী করবে তালিবান?

বহু আফগান বাসিন্দারই ভয়, তালিবানরা আবারও জারি হবে সারিয়া (Sharia) বা ইসলামিক আইন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল অবধি তালিবান শাসন চলাকালীনও জারি ছিল এই সারিয়া, যাতে মেয়েদের পোশাক থেকে শিক্ষা-সবকিছুতেই ফতেয়া জারি করা হয়েছিল। সামান্যতম অপরাধেও মিলত প্রাণদণ্ড। পুনরায় সেই দিনটিই ফিরে আসছে বলেই সন্দেহ আফগানবাসীদের।

তালিবানিদের তরফে জানানো হয়েছে, এ বার নারী ও শিশু সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। আফগান নাগরিক ও বিদেশীদেরও সুরক্ষা দেওয়া হবে, মহিলাদের লেখাপড়া ও চাকরির পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতাও দেওয়া হবে।

যদিও বাস্তব চিত্র কিন্তু বেশ কিছুটা ভিন্ন। গত সপ্তাহেই আঁটসাঁট পোশাক পরার অপরাধে এক মহিলাকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছিল। গতকালও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একাধিক চিত্র যেখানে দেখা যায়, শহরজুড়ে শোরুমে স্বল্পবসনাদের ছবি সাদা রঙ করে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। মুখে শান্তির বার্তা দিলেও গতকাল সারারাত ধরেই কাবুলের বিভিন্ন অংশে বোমা ও গুলি চালনার শব্দ শোনা গিয়েছে। আরও পড়ুন: কোনওমতে কাটল আতঙ্কের প্রথম রাত! আফগানিস্তান থেকে ভারতীয়দের ফেরাতে প্রস্তুতি তুঙ্গে