ব্যাঙ্কক: ক্রমাগত বৃষ্টিতে আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে ভারী বন্যা। এর মধ্যেই জীবনের সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে হয়েছে ন্যাথাপাক খুমকাদকে। থাইল্যান্ডের উত্তর অংশের লামফুন এলাকার এক কুমির চাষী তিনি। কুমিরের একটি খামার চালান। কিন্তু সম্প্রতি, অবিরাম বৃষ্টির মধ্যে এলাকার মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে, তিনি নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। একপ্রকার বাধ্য হয়ে হত্যা করেছেন তাঁর খামারের প্রায় ১০০টিরও বেশি কুমিরকে। যেগুলির কোনও-কোনওটি প্রায় তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা।
আসলে, সেপ্টেম্বরে মাস জুড়ে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে তীব্র মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে জায়গায় জায়গায় ধস নেমেছে, বন্যা দেকা দিয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ২০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। লামফুন প্রদেশেও তাণ্ডব চালিয়েছে প্রকৃতি। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে ন্যাথাপাক খুমকাদের সিয়ামিজ কুমিরের ঘেরাটোপও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিএনএন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘেরাটোপের ভিতর জলের নীচে থাকা দেওয়ালটি ধসে যায়। বাইরের যে দেওয়ালটি সেটিও ঝুরঝুরে হয়ে পড়েছিল। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। খুমকাদের খামারের কর্মীরা, যত দ্রুত সম্ভব পুকুরটি ঠিক করার চেষ্টা করেছিল, তবে অবিরাম বৃষ্টি তাদের কাজ কঠিন করে দেয়।
এই অবস্থায় খুমকাদের কুমিরের খামার, তাঁর প্রতিবেশিদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। খুমকাদ ভয় পেয়েছিলেন, খামারের দেওয়াল ভেঙে গেলে কুমিরগুলি পালিয়ে যেতে পারে। প্লাবিত গ্রামাঞ্চলে ঘোরাফেরা করতে পারে তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং তাদের গবাদি পশুদের আক্রমণ করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদের প্রাণ সংশয় তৈরি হবে। এই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, তার জন্য তিনি তাঁর খামারে থাকা ১২৫টি কুমিরকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ব্যবসার বড় ক্ষতি স্বীকার করেন তিনি।
খুমকাদ বলেছেন, “তাদের সবাইকে হত্যা করাটা, আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আমার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। প্রাচীরটা ধসে গেলে অনেক মানুষের প্রাণ সংশয় হত। আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। এতে জননিরাপত্তার বিষয় জড়িয়ে ছিল।” কুমিরের পুকুরের দেওয়ালটা ক্ষয়ে যাওয়াতেই এই জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি বলে, দাবি খুমকাদের। তিনি বলেছেন, “সেদিন, অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছিল। পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। এই গভীর সংকটে আমায় অত্যন্ত জরুরী সিদ্ধান্ত নিতে হত। শেষ পথ ছিল ওদের সবাইকে জবাই করা। যদি একান্তই প্রয়োজন না হত, তাহলে আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতাম না। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে, ওটাই সবথেকে ভাল, দ্রুত এবং নিরাপদ রাস্তা বলে মনে হয়েছিল।”