
আমেরিকার ভার্জিনিয়ার একটা সংস্থা গোভিনি। এরা মূলত ডিফেন্স নিয়ে কাজকর্ম করে। সমীক্ষা চালায়। নিজেদের দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই এরা একটা রিপোর্ট দিয়েছে। নাম, ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্কোরকার্ড-২০২৫. মূল পয়েন্ট দুটো। দুটোই চমকে ওঠার মতো। এক, আধুনিক যুদ্ধের প্রস্তুতিতে চিন-রাশিয়ার থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে আমেরিকা। দুই, চিনকে ছাড়া আমেরিকার প্রতিরক্ষা উত্পাদন কারখানাগুলো অচল। যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যারিফ নিয়ে চিনের সঙ্গে মারামারিতে যাচ্ছেন, সেই চিনের কল্যাণেই নাকি বেঁচে আছে আমেরিকার প্রতিরক্ষা! বলছে মার্কিন সংস্থাই। একে ট্রাম্পের কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোঁড়ার মতো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কী বলা যায়। বিষয়টা একটু খোলসা করা যাক।
চিনকে ছাড়া আমেরিকার প্রতিরক্ষা উত্পাদন কারখানাগুলো অচল। ইউএস ডিফেন্স থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গোভিনির রিপোর্ট বলছে, আমেরিকার কারখানাগুলোয় যেসব যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি হচ্ছে, তার কাঁচামাল, উপাদান এবং যন্ত্রাংশ আসছে চিন থেকে। গতবছর আমেরিকার ন’টা গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স প্রোগ্রামে মূল ঠিকাদার ছিল নানা চিনা সংস্থা। যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, স্থলসেনার জন্য আধুনিক অস্ত্র, মহাকাশে গুপ্তচর উপগ্রহ, দূরপাল্লার মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও পরমাণু হাতিয়ার। এসব তৈরির জন্য যে কাঁচামাল ও বিরল খনিজ পদার্থের দরকার হয়, তার পুরোটাই চিন থেকে আসে আমেরিকায়। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে এতদিন পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে বেজিঙের উপর নির্ভরশীলতা ছিল সবচেয়ে কম। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেটাও মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকার নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামের সঙ্গে জুড়ে আছে ৫০০-র বেশি চিনা ভেন্ডার। সবমিলিয়ে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে এই মুহূর্তে আমেরিকার ডিফেন্স সেক্টরের ৩৭ শতাংশ দখল করে ফেলেছে চিন।
আধুনিক যুদ্ধের প্রস্তুতিতে চিন-রাশিয়ার থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে আমেরিকা। গোভিনির রিপোর্ট বলছে, প্রথম কারণ, চিন ডিফেন্সে যে হারে বাজেট বাড়াচ্ছে তা অভাবনীয়।আর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ডিফেন্স ম্যানুফ্যাকচার ৫ গুণ বেড়ে গেছে। দ্বিতীয় কারণ, আমেরিকার মতো প্রতিরক্ষা উত্পাদনে চিন ও রাশিয়া পরনির্ভরশীল নয়। ফলে এই ২ দেশ এখন আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে। একইসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে যে চিন চাইলেই আমেরিকায় রেয়ার আর্থ মেটাল পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা হলে নেমে আসবে সর্বনাশ। তাই, মুখে যাই বলা হোক না কেন, চিনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমেরিকার পক্ষে খুব কঠিন। গোটা বিষয়টা নিয়ে মুখে কুলুপ পেন্টাগনের। গোভিনি বলছে এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিয়নে লালফৌজ যখন তুফান তুলছে। তখন এই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন সেনাকে নাকি পর্যাপ্ত অস্ত্র, রসদ সরবরাহ করতেই পারছে না পেন্টাগন।