
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বাস্তব জীবন, ‘ওয়ার্ক কালচার’ দিনে দিনে সচেতনতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। অল্প বেতনে বহু কাজ করিয়ে নেওয়া বা ঘন্টার পর ঘন্টা কাজের জায়গায় অনেক দেশেই এখন ৪ দিন সপ্তাহে অফিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও বহু সংস্থায় ৫ সপ্তাহে ৫ দিন কাজ এবং ২ সিন ছুটির নিয়মের প্রচলন রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মঘণ্টার দৈর্ঘ্য নিয়েও আজকাল চলছে জোর আলোচনা। যদিও ভারতের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সংস্থায় এখনও সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করার ধারাই প্রবর্তিত। এমনকি ‘ওয়ার্ক কালচার’ নিয়েও সচেতন বেশিরভাগ।
আচ্ছা একবার ভাবুন তো প্রতি সপ্তাহে মাত্র এক দিন কাজ আর ৬দিন ছুটি হলে কেমন হত? শুনেই মনটা খুশি হয়ে ওঠে না! অলীক কল্পনা মনে হলেও এমন নিয়ম কিন্তু প্রবর্তিত আছে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে। ওয়ার্ক কালচারের দিক থেকে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ছোট্ট দেশটি। এই দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে কম গড় কর্মঘণ্টার জন্য বিখ্যাত। এই দেশে প্রতি সপ্তাহে মানুষ গড়ে মাত্র ২৪.৭ ঘণ্টা কাজ করে।
ভানুয়াতুর এই স্বল্প কর্মঘণ্টার সংস্কৃতি তাদের সমাজ ও সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত। এখানে মানুষ ব্যক্তিগত সুখ, পরিবার সঙ্গে সময় কাটানোকে অধিক , বন্ধু-বান্ধব এবং আপনজনের সঙ্গে সময় কাটানোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এই মনোভাব কর্মজীবনের সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের সুষম সমন্বয় সাধনের জন্য বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে সাপ্তাহিক ককাজ করার সময় এর প্রায় দ্বিগুণ। কখনও কখনও তারও বেশি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) এক প্রতিবেদন অনুসারে ভুটানে ৬১% কর্মজীবী প্রতি সপ্তাহে ৪৯ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ভারতে সেই হার ৫১%, বাংলাদেশে ৪৭% এবং পাকিস্তানে ৪০%। এই অতিরিক্ত চাপের মধ্যে কাজ কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে জানাচ্ছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন কর্মঘণ্টা কমানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। আইসল্যান্ডে চারদিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ব্রিটেনও সাপ্তাহিক ৫ দিন থেকে ৪ দিন কাজ করার চিন্তাভাবনা করছে। যার পরে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন সংস্থার। স্পেন ও নিউজিল্যান্ডেও অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভানুয়াতুর উদাহরণ দেখিয়ে দেয়, কম কর্মঘণ্টা মানেই কম উৎপাদনশীলতা নয়। বরং, এটি কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক। যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। অথচ পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শ্রমের হার কতটা বেশি। এমনকি অফিসের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন মানুষ, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে আমাদের চারপাশে। যা দিনের শেষে প্রশ্নেরে মুখে দাঁড় করায় এই সব দেশের ওয়ার্ক কালচারকে।