আচমকা চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ল তিনটি রুশ যুদ্ধজাহাজ, কী ঘটতে চলেছে বাংলাদেশে?
শেষবার ১৯৭২-এ চট্টগ্রাম বন্দরে শেষবার কোনও রুশ যুদ্ধজাহাজ এসেছিল। সেবারও অবস্থান ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর চট্টগ্রামেই নোঙর ফেলে একাধিক রুশ যুদ্ধজাহাজ।

কী ঘটছে বাংলাদেশের অন্দরে, এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় আন্তর্জাতিক মহল! সম্প্রতি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে তিনটি রুশ যুদ্ধজাহাজ। প্রায় ৫০ বছর পর ফের বাংলাদেশের চট্টগ্রামের নৌবন্দরে ভিড়ল রুশ যুদ্ধজাহাজ। রুশ নেভির তিনটি যুদ্ধজাহাজ, (১) রেজকি, (২) হিরো অফ দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন অলডার টাইডেনজ্যাপভ ও (৩) পেশেঙ্গা এই মুহূর্তে নোঙর ফেলে রয়েছে চট্টগ্রামে। তাদের স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশি নৌসেনার বিএনএস খালিদ বিন ওয়ালিদ যুদ্ধজাহাজ।
শেষবার ১৯৭২-এ চট্টগ্রাম বন্দরে শেষবার কোনও রুশ যুদ্ধজাহাজ এসেছিল। সেবারও অবস্থান ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর চট্টগ্রামেই নোঙর ফেলে একাধিক রুশ যুদ্ধজাহাজ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে তখন অর্থের তীব্র অভাব। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পাক সেনার ফেলে যাওয়া হাজার হাজার মাইন পোঁতা চট্টগ্রাম বন্দরের মাটি ও জলের নিচে। ওই মাইনগুলি নিষ্ক্রিয় করার জন্য যত অর্থ ও লোকবলের প্রয়োজন ছিল, বাংলাদেশের পক্ষে তত অর্থ খরচের সাধ্য তখন ছিল না। বাধ্য হয়ে ঢাকা তখন একাধিক দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। অনেক দেশই মুখ ফিরিয়ে নেয়, ভারত ও রাশিয়া ছাড়া!
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-এর এপ্রিল থেকে ১৯৭৪-এর জুন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জন রুশ নৌসেনা ২৬টি বাংলাদেশি জাহাজ উদ্ধার করে। তাঁদের লাগাতার চেষ্টায় অন্তত ১০০ হাজার টন মাইন ও অন্যান্য বিস্ফোরক উদ্ধার করা চট্টগ্রাম বন্দরের জলের নিচ থেকে। গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে রাশিয়ার লেগেছিল ২ বছরেরও বেশি। ওই উদ্ধারকাজের সময়, ১৯৭৩-এর ১৩ জুলাই রুশ সেনার এক অভিজ্ঞ নাবিক য়ুরি রেডকিন মারাও যান। পাশাপাশি, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পেতে লোকবল দিয়েই সাহায্য করেনি, অকাতরে অর্থও বিলিয়েছে। সে সব টাকা ভারত কখনও ফেরতও চায়নি। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার পাশাপাশি ভারতও সেদিন একাধিক যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিস্ফোরকমুক্ত করেছিল। ভারতীয় নৌসেনার বালসার-এর মতো জাহাজ মঙ্গলা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিচে পুঁতে রাখা পাক সেনার মাইনগুলি চিহ্নিত করে উদ্ধার করেছিল।

প্রতীকী ছবি
সেই বাংলাদেশে আজ আবার নোঙর ফেলেছে রুশ যুদ্ধজাহাজ। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন- কেন? আসলে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান চারদিনের সফরে মস্কো ঘুরে এসেছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বেজিংয়ের উপর থেকে একক নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে চাইছে ঢাকা। কারণ, ঢাকা বুঝতে পারছে, যাবতীয় পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও সামরিক সরঞ্জামের জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল থাকলে দ্রুতই সে দেশের হালও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। তাই দু দেশের মধ্যে মিলিটারি পার্টনারশিপ বাড়ানোর উপর জোর দিতে চাইছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, রাশিয়াও চায় দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের প্রভাব খানিকটা খর্ব করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে। সম্প্রতি মায়ানমারেও রুশ হস্তক্ষেপ নজরে এসেছে। তাই বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষায় সাহায্য করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান পুতিন। অন্যদিকে, বাংলাদেশেও দ্রুতই নির্বাচন হতে পারে। শুধুমাত্র আমেরিকা বা চিনের উপর নির্ভর করে থাকলে আন্তর্জাতিক মহলে ভুল বার্তা যেতে পারে। তাই পশ্চিমা সংস্কৃতি ও প্রভাবকে মোকাবিলা করতে রাশিয়ার দিকে সামান্য ঝুঁকলে ক্ষতি নেই, এমনটাই সম্ভবত মনে করছে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।





