ইসলামাবাদ: ২০২১ সালের অগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিল তালিবান গোষ্ঠী। এরপর আবার আরেক দেশের ক্ষমতা দখল করায় মন দিয়েছে তারা। এবার তাদের নজর পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি (TTP)। এই গোষ্ঠী পাকিস্তানি তালিবান নামেই বেশি পরিচিত। সম্প্রতি তারা উত্তর পাকিস্তানে নিজেদের পৃথক সরকার গঠনের ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, আলাদা আলাদা মন্ত্রকও ঘোষণা করেছে তারা।
টিটিপির মুখপত্র ‘দ্য খোরাসান ডায়েরি’তে তারা এই সরকার গঠনের কথা জানিয়েছে। এই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি সংগঠনকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা, বিচার, তথ্য, রাজনৈতিক বিষয়, অর্থনৈতিক বিষয়, শিক্ষা, ফতোয়া জারিকারী কর্তৃপক্ষ, গোয়েন্দা এবং পরিকাঠামো নির্মাণের মতো বেশ কয়েকটি মন্ত্রকে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রকে নতুন নিয়োগের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।” শুধু তাই নয়, উত্তর পাকিস্তান অঞ্চলকে দুটি প্রদেশে ভাগ করার কথাও ঘোষণা করেছে টিটিপি। উত্তরের প্রদেশ গঠিত গিলগিট, বাল্টিস্তান এবং আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা নিয়ে। আর পাক পঞ্জাব সংলগ্ন এলাকাগুলি এবং পাক পঞ্জাবের ডেরা গাজি খান এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে দক্ষিণের প্রদেশ।
আফগানিস্তানের শাসক তালিবান গোষ্ঠীর সঙ্গে টিটিপির পার্থক্য থাকলেও, দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আফগান-তালিবানদের সঙ্গে পাক সরকারের চুক্তি মেনে তারা দীর্ঘদিন যুদ্ধবিরতি বজায় রেখেছিল। কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে সেই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে এসেছে টিটিপি। তারপর থেকে পাকিস্তানে টিটিপি-র হামলার বহুগুণে বেড়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিওরিটি স্টাডিজ় নামে পাকিস্তানের এক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতে, ২০২২ সালে পাক সেনার অন্ততপক্ষে ২৮২ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে। কোনও ক্ষেত্রে আইইডি বিস্ফোরণ, কোনও ক্ষেত্রে আত্মঘাতী হামলা, কোনও ক্ষেত্রে সামরিক স্থাপনায় হামলার শিকার হয়েছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের উত্থান এখন রাজনৈতিক বাদানুবাদের অংশ হয়ে উঠেছে। গত বুধবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ জানান, উত্তর পাকিস্তানে আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অন্তত ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ টিটিপি জঙ্গি আছে। এর আগে যারা অস্ত্র নামিয়ে রেখেছিল, সেই সকল প্রাক্তন জঙ্গিরাও ফের সক্রিয় হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। টিটিপির এই বাড়াবাড়ন্তর জন্য তিনি সরাসরি ইমরান খানের দলের নেতৃত্বাধীন খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “এর (টিটিপির উত্থানের) সবথেকে বড় কারণ খাইবার পাখতুনখোয়া সরকার এবং সন্ত্রাসবাদ দমন শাখার ব্যর্থতা। জঙ্গিদের প্রতিরোধ করাটাই তাদের কাজ।”