
দক্ষিণ এশিয়ায় কি নিজেদের পা শক্ত করতে চাইছে তুরস্ক? যে তুরস্ক ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন ভারতের সঙ্গে ‘বেইমানি’ করেছিল, পাকিস্তানকে ড্রোন পাঠিয়ে? তলে তলে প্রথমে পাকিস্তান আর এবার বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে চাইছে? দক্ষিণ এশিয়ায় পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ভারতের প্রতিবেশীদের কি ভারতেরই বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চাইছে? বা ভারত-বিরোধী ষড়যন্ত্র কষছে? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ মঙ্গলবার, ৮ জুলাই বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে সে দেশে প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখালেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা সচিব। অন্তত ঢাকার তেমনটাই দাবি। তবে কি এবার বাংলাদেশে আরও ভারত-বিরোধী জিগির উঠবে? সূত্রের খবর, তুরস্কের কাছ থেকে কি ড্রোন ও নজরদারি সংক্রান্ত সরঞ্জাম কিনতে চায় ঢাকা।
এমনিতেই তুরস্কের সাম্প্রতিক বিদেশনীতি নিয়ে সন্দিহান দিল্লি। ভারতের সঙ্গে তুরস্কের দিব্যি ভাল সম্পর্ক ছিল। এদেশের মানুষ মনের সুখে তুরস্কে ঘুরতে যেতেন। তুরস্ক পর্যটনের লক্ষ্মীলাভ হত ভারতীয় পর্যটকদের পকেট থেকে। এমনকী, দু দেশের দোস্তির খাতিরে ভারত ২০২৩-এ তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় সে দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে ‘অপারেশন দোস্ত‘-এর মাধ্যমে নিজেদের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সেই তুরস্কই পিছন থেকে ভারতকে ছুরি মারে। পাকিস্তানকে ড্রোন পাঠিয়ে সাহায্য করে অবশ্য নিজের পায়েই কুড়ুল মারে আঙ্কারা। ভারতীয়রা স্বেচ্ছায় তুরস্ককে বয়কট করে। আর এবার সেই তুরস্কই বাংলাদেশকে সাহায্যে এগিয়ে এল? প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নজর কি এবার দক্ষিণ এশিয়ায়? প্রথমে পাকিস্তান আর এবার কি বাংলাদেশের দিকে হাত বাড়িয়ে তলে তলে ভারত-বিরোধী জিগির তুলতে চান এরদোগান? ভারতের চিন্তার প্রধান কারণ, বাংলাদেশের জামাতের মতো জঙ্গি সংগঠনকে তুরস্কের খুল্লামখুল্লা সমর্থন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ঢাকায় জামাতের দফতর সংস্কারে ঢালাও অর্থ বরাদ্দ করেছে তুরস্ক। এমনকী, কয়েকজন জামাত এ ইসলামি নেতা তুরস্কে গিয়ে অস্ত্র কারখানাতে ঘুরেও এসেছেন। সম্প্রতি, ভারত-মায়ামনার সীমান্তে তুরস্কের নজরদারি ড্রোন দেখতে পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বাংলাদেশি সেনা তুরস্কের ড্রোনগুলি পরীক্ষা করে দেখছিল। এরকমই তুরস্কের ড্রোন অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানও ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল। সেগুলি ভারত মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছিল সেবার।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিল্লির মাথাব্যথার কারণ আরও রয়েছে। ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতি তুরস্কের ঘোষিত সমর্থন রয়েছে। তাই পাকিস্তানকে সরাসরি অস্ত্র বা সেনা দিয়ে সাহায্য না করলেও মতাদর্শগত সমর্থন জুগিয়েছে তুরস্ক। আর এবার কি বাংলাদেশকেও? তুরস্কের প্রতিরক্ষা সচিব গোরগান মঙ্গলবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে ঢাকা সূত্রে খবর। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করার আশ্বাস মিলেছে তুরস্কের তরফে। এমনকী, বাংলাদেশেই তুরস্কের কারিগরী সহায়তায় বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরি এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ দেখান তুরস্কের প্রতিরক্ষা সচিব। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহম্মদ ইউনুসের সঙ্গেও দেখা করবেন তিনি। তুরস্কের সাহায্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে দুটি ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরির চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে বৈঠকে। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ভারতের ইস্টার্ন প্ল্যাঙ্কের সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসবে আঙ্কারা। এমনিতে বঙ্গোপসাগরের আশেপাশে তুরস্কের চোখে পড়ার মতো কোনও উপস্থিতি নেই। বাংলাদেশে তুরস্কের সহযোগিতায় ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরি হলে এটাই হবে তুরস্কের প্রথম বড় পদক্ষেপ। এবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির প্রধান আশিক মাহমুদ হারুণ তুরস্ক সফরে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাতে তুরস্কের বিনিয়োগ টেনে আনা পাখির চোখ ছিল ইউনূস সরকারের, মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।