ইউক্রেন থেকে সরাসরি: শর্বরীরা চোখের সামনে দেখলেন, বিস্ফোরণে ঝলসে গেল নবীন

Indian Student Killed in Shelling in Ukraine: হোয়াটসঅ্যাপ করতে তাঁর ছোট্ট জবাব আসে, "খুব খারাপ অবস্থা। আমাদের এক সিনিয়র মারা গিয়েছে এয়ার স্ট্রাইকে। আমরা এখন ওয়েস্টার্ন ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছি। পরে কথা বলছি।"

ইউক্রেন থেকে সরাসরি: শর্বরীরা চোখের সামনে দেখলেন, বিস্ফোরণে ঝলসে গেল নবীন
গ্রাফিক্স: টিভি৯ বাংলা
Follow Us:
| Updated on: Mar 02, 2022 | 7:25 PM

খারকিভ: সময় দুপুর ২ টো ৫৮ মিনিট। কৃষ্ণসাগরের ওপার থেকে দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর একটি টুইট। রাশিয়ার জঙ্গিহানায় ইউক্রেনের মাটিতে নিহত হল এই প্রথম কোনও এক ভারতীয়। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া ভারতীয় ছাত্র নবীন শেখারারাপ্পা গ্যানাগৌড়ার খারকিভে রুশ সেনার হাতে মৃত্যু হয়েছে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়। ইতিমধ্যেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিদেশমন্ত্রক। পাশাপাশি নিহত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে মন্ত্রকের প্রতিনিধি। এই খবর জানা ইস্তক TV9 বাংলা দ্রুত যোগাযোগ করে খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শর্বরী বিশ্বাসের সঙ্গে। দু’দিন আগেই তাঁর সঙ্গে কথা হয় TV9 বাংলার। প্রবল উৎকণ্ঠা নিয়ে জানার চেষ্টা চলে কেমন আছে শর্বরী। হোয়াটসঅ্যাপ করতে তাঁর ছোট্ট জবাব আসে, “খুব খারাপ অবস্থা। আমাদের এক সিনিয়র মারা গিয়েছে এয়ার স্ট্রাইকে। আমরা এখন ওয়েস্টার্ন ইউক্রেনের দিকে যাচ্ছি। পরে কথা বলছি।”

শর্বরীর এই মেসেজ আরও বেশি উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়। প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে, শুধুই কি কর্নাটকের ছাত্রটির মৃত্যু হয়েছে? আরও কারোর জখম হওয়ার খবর নেই তো? শর্বরীরাই বা কীভাবে এই চক্রব্যূহ থেকে বেরতে পারবে? কিছুক্ষণ পরেই নিজেই ফোন করেন শর্বরী। TV9 বাংলাকে জানান, “আজ সকালে আমরা ঠিক করি যে করে হোক খারকিভ থেকে আমাদের বেরতে হবে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা এখান থেকে রওনা দিই এবং সেই মুহূর্তেই একটি বিস্ফোরণ হয় আমাদের বাড়ির সামনেই। ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় নবীন।”

শর্বরীর দু’ বছরের সিনিয়র ছিল নবীন। চোখের সামনে নবীনের মৃত্যু তাঁদেরকে আরও হতভম্ব করে দেয়। একদিকে যুদ্ধের সাইরেন, বোমার আওয়াজ, অন্যদিকে সহযাত্রীর মৃত্যু- দিশাহারা শর্বরীরা ভাবতেই পারছিলেন না এরপর কী করবে? শর্বরী জানান, “এখন আমরা ট্রেনে আছি। আমরা ছয় জন আছি। লিভিভের দিকে রওনা দিয়েছি। এরপর কী করব জানি না। এর আগে আমাদের অনেক পরিচিত খারকিভ থেকে লিভিভ চলে গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঠিক করব কীভাবে বর্ডার পার করা যায়।” শর্বরীদের সঙ্গে নবীনও বেরিয়েছিল লিভিভের উদ্দেশ্যে। ভেবেছিল যদি কোনওভাবে দেশে ফেরা যায়। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না নবীনের। শর্বরীদের সঙ্গে এরপর কী হবে তাও জানা নেই। পুরো সময়টাই কাটছে আতঙ্কে আর অনিশ্চয়তায়।

গত শনিবার TV9 বাংলাকে শর্বরী জানিয়েছিলেন, তাঁর মতো বহু ভারতীয় পড়ুয়া আটকে আছে খারকিভে। সেখানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। জল নেই, খাবার নেই। বম্ব-শ্লেটারে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এরপরই জানা যায়, রবিবার রুশ সেনা হামলা চালায় খারকিভ শহরে। ২৪ তারিখ থেকেই খারকিভে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় গুলি-বোমা বর্ষণ চলছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ইউক্রেন-রাশিয়ার মতো সমান্তরাল যুদ্ধ চালাচ্ছেন যাদবপুরের মেয়ে শর্বরীও।

Disclaimer: শর্বরীর কথা অনুযায়ী, তাঁদের বাড়ির সামনের সুপার মার্কেটে সকাল ৭.৩০টা নাগাদ একটি বিস্ফোরণ হয় এবং সেখানেই মারা যায় নবীন। অন্যদিকে, নবীনের আরেক বন্ধু শ্রীধরন গোপালকৃষ্ণান জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রুশ সেনা ওই সুপার মার্কেট এলাকায় স্থানীয়দের ভিড় দেখে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। গুলি লেগেই নবীনের মৃত্যু হয়। নবীনের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। এর পাশাপাশি জানা গিয়েছে, এখন নবীনের মৃত দেহ খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির মর্গে রাখা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘জল নেই, খাবার নেই! এরপর কী হবে জানি না’, ইউক্রেনে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন বাঙালি পড়ুয়া