কলকাতা: ২০১৮ সালের পর ২০২৪, আরও একবার কোটা বিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি বাংলাদেশে। জুলাই মাসের গোড়া থেকেই শুরু হয়েছিল এই আন্দোলন। তবে, গত সোমবার (১৫ জুলাই), রাত থেকে এই আন্দোলন ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। শুধু সরকার নয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে শাসক দল আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলিগের সদস্যরাও। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর-সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলনের আঁচ। মঙ্গলবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৬ জনের। আহত অন্তত চারশোর বেশি ছাত্রছাত্রী। তার মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই সংঘর্ষের অংসখ্য স্পর্শকাতর ছবি। কিন্তু, কেন এই সংঘর্ষ? কেন এই আন্দোলন? আন্দোলনকারীদের দাবিই বা কী?
কোটা কী, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ভারতেও শিক্ষাক্ষেত্র থেকে সরকারি চাকরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণি, মহিলাদের মতো বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট কিছু আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া বা অনগ্রসর মানুষদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যেই এই কোটা বা সংরক্ষণ। ব্রিটিশ ভারতে যেমন সরকারি চাকরিতে ভারতীয়দের জন্য কোটার ব্যবস্থা ছিল। বাংলাদেশেও স্বাধীনতার পর থেকেই কোটা চালু করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী – এই পাঁচ ক্যাটাগরির জন্য মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। গত ৫ জুন সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। এরপরই, সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে শুধুমাত্র অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে, বাকি সকল কোটা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে যখন প্রথম কোটা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সেই সময় কোটার পরিমাণ ছিল আরও বেশি।
মেধায় জোর কম, কোটায় বেশি
১৯৭২ সালে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দফতরে, প্রথম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মাত্র ২০ শতাংশ মেধা এবং বাকি ৮০ শতাংশ জেলার কোটা রাখা হয়েছিল। এই ৮০ শতাংশ কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এবং ১০ শতাংশ মহিলাদের জন্য। চার বছর পরই কোটা বণ্টনে বদল এনে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং মহিলাদের জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হয়। ৪০ শতাংশ বরাদ্দ করা হয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য। আর, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের, ১০ শতাংশ মহিলাদের, ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের এবং বাকি ১০ শতাংশ জেলার জন্য বরাদ্দ করা হয়।
কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েরা
১৯৮৫-তে বাংলাদেশের কোটা পদ্ধতিতে আরও বদল আসে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পাশাপাশি, কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে মেধাভিত্তিক কোটা রাখা হয় ৪৫ শতাংশ। আর জেলাভিত্তিক কোটা রাখা হয় ৫৫ শতাংশ। জেলার কোটা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা হয়। ১৯৯৭-এ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল, তাতে উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী না পাওয়া গেলে, মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-মেয়েরা সংশ্লিষ্ট কোটায় সুযোগ পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এবার নাতি-নাতনিরাও
২০০২-তে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ কোটা বণ্টনের বিষয়ে আগের জারি করা সকল সরকারি বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে, ওই কোটার অধীনে থাকা শূন্যপদগুলি মেধাভিত্তিক তালিকার প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করা হবে বলে জানায় বিএনপি সরকার। ২০০৮-ও আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে এই নির্দেশ বাতিল করেছিল। এরপর, ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, উপযুক্ত প্রার্থী না পেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের ওই চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১২ সালে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা রাখা হয়।
কোটার বড় অংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ। তবে, এই কোটা দাবি করার জন্য কোনও মুক্তিযোদ্ধা আর অবশিষ্ট নেই। তাঁদের নাতিপুতিরাই এই কোটার সুবিধা ভোগ করছেন। আর এর জেরে মেধাবি ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বাংলাদেশে শেষ যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই থেকে আড়াই লাখ। অর্থাৎ, বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ০.১৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা। আর তাদের জন্যই বরাদ্দ ৩০ শতাংশ কোটা। এদিকে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানে চাকুরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকলে সকল নাগরিকের সমান সুযোগের অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। এছাড়া, তাঁদের দাবি, কোটা ব্যবস্থা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জন্য। অথচ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিরা জন্ম থেকেই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই তাঁরা কীভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, সেই প্রশ্নও রয়েছে।
২০১৮ – শাহবাগ
বাংলাদেশে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার তুলনায় কোটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষের মনে অসন্তোষ ছিল। সীমিত আকারে বেশ কয়েকটি কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। তবে, ২০১৮ সালে প্রথম এই আন্দোলন বৃহত্তর আকার নিয়েছিল। ২০১৮-র জানুয়ারিতে, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা এবং এই ব্যবস্থার পুর্নমূল্যায়ন চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও দুই সাংবাদিক। তাদের দাবি ছিল, কোটা পদ্ধতি বাংলাদেশের সংবিধানের চেতনার বিরোধী। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শাহবাগে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনও তৈরি হয়। ধীরে ধীরে দানা বাঁধতে থাকে কোটা আন্দোলন।
তবে, ওই বছরের মার্চে রিট পিটিশনটি খারিজ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ হাইকোর্ট। এরপর হাসিনা সরকার জানায়, কোটা পদ্ধতিতে কোনও পরিবর্তন করা হবে না। তবে, কোটা ব্যবস্থা প্রয়োগে কিছুটা শিথিলতা এনেছিল সরকার। বলা হয়, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে, মেধা তালিকা থেকে সেই পদগুলি পূরণ করা হবে। তবে কোটা সংস্কারের দাবি অনড় ছিল শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তেই, সরকারকে জবাব দিতে দেখা গিয়েছিল টিয়ারগ্যাস ও শূন্যে গুলি ছুড়ে। কিন্তু, এপ্রিলে শাহবাগের আন্দোলন থেকে গোটা দেশে ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করা শুরু করেছিল কোটা বিরোধী ছাত্রছাত্রীরা। চাপের মুখে, ১১ই এপ্রিল বাংলাদেশি সংসদে, সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল কোটা বাতিল করা হয় এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদগুলিতে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে মেধা তালিকা থেকে প্রার্থীদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০২৪ – বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
২০২১ সালে, হাসিনা সরকারের এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারবর্গ। হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন তাঁরা। সেই মামলার রায়ই দেওয়া হয়েছে গত পাঁচই জুন। ফিরে এসেছে কোটা ব্যবস্থা। হাইকোর্টের ওই রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিল সরকার। তবে, আদালত সরকারকে ‘লিভ টু আপিল’ করতে নির্দেশ দেয়। এর মধ্যেই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এক দফা দাবি – ‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’
জুলাই মাসের শুরু থেকে বাংলাদেশ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিচ্ছেন এই আন্দোলনে। শুরু থেকে সরকারকে বেশ সহনশীল ভূমিকায় ছিল। কিন্তু, গত সোমবার চিন থেকে ফিরে শেখ হাসিনা এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। কোটা আন্দোলন সম্পর্কে সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, “কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই।” তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ এরপরই কোটা বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন, ‘তুমি কে আমি কে – রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে – সরকার সরকার’; ‘চাইতে গেলাম অধিকার- হয়ে গেলাম রাজাকার’; ‘কোটা নয় মেধা- মেধা মেধা’।
স্পষ্টতই, প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পরই আন্দোলন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। তবে, ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করেছে হাসিনা সরকার। ছাত্রলিগ, যুবলিগের সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। আওয়ামি লিগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই আন্দোলন আসলে সরকার বিরোধী আন্দোলন। এর পিছনে বিএনপি-র হাত আছে। কিন্তু সত্যিই কী তাই? কারা করছে এই কোটা বিরোধী আন্দোলন?
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম মারফত জানা যাচ্ছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর কোনও একক মুখপাত্র নেই। কোনও একক নেতৃত্ব নেই। দেশব্যাপী এই আন্দোলন সংগঠিত করতে ৬৫ সদস্যের এক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলনের ২৩ জন সমন্বয়ক রয়েছেন। সমন্বয় কমিটিতে আঠারো সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আছেন। অনেকেই আছেন যারা ছাত্র রাজনীতি করেন কিংবা কোনও ছাত্র সংগঠনের সদস্য। গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি, বাম ছাত্র সংগঠন এমনকি, ছাত্রলিগের কয়েকজন সদস্যও আছেন সমন্বয় কমিটিতে। আন্দোলনকে যাতে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া না যায়, তার জন্য কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের। নেই বিএনপি বা জামাতের ছাত্র সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি। আন্দোলনকে একেবারেই অরাজনৈতিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কোনও মতাদর্শের ছাত্রছাত্রীরাই আন্দোলনে অংশ নিতে পারে, তবে কেউ যাতে রাজনৈতিক স্বার্থে এই আন্দোলনকে ব্যবহার করতে না পারে, সতর্ক থাকছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন শেষ হলেই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও ভেঙে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষা মহল মনে করছে, কোটার বিষয়টি খুব সরল নয়। এতে অনেক জটিলতা আছে। অনগ্রসরদের মূল স্রোতে তুলে আনার লক্ষ্য়েই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু, কোটা ব্যবস্থা সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন আছে। অনগ্রসর শ্রেণির কেউ চাকরি পেয়ে গেলে, তিনি আর সেই শ্রেণিতে থাকবেন না। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে কোটা ব্যবহার করে তার পরবর্তী প্রজন্মও চাকরি পাচ্ছে। এই বিষয়গুলির পর্যালোচনা প্রয়োজন। হাসিনা সরকারও যে কোটার বিরুদ্ধে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোটা ব্যবস্থা হাসিনা সরকার তুলে দিয়েছিল, কিন্তু ফের আদালতের নির্দেশে কোটা ফিরে আসে। তাই, আর নিজেদের কোর্টে বল না রেখে হাসিনা আদালতের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আদালতের নির্দেশের উপর তাঁর কিছু করার নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে যেদিকে পরিস্থিতি এগোচ্ছে, কিছুটা নরম সুর শোনা গিয়েছে হাসিনার কণ্ঠে। আলোচনার পথও খোলা রাখছেন তিনি।