TV9 Explained: কারা এই হামাস গোষ্ঠী, কী চায় তারা? ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে আছে কে কে?

Israel Hamas conflict: ইজরায়েল-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি দেশ হামাস বাহিনীকে জঙ্গি গোষ্ঠী বলে মনে করলেও, গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের কাছে কিন্তু হামাস তাদের মুক্তিদাতা। কারা এই হামাস? তারা কি জঙ্গি না স্বাধীনতা সংগ্রামী? কেন ইজরায়েলে এই রকম ভয়ঙ্কর হামলা চালাল তারা?

TV9 Explained: কারা এই হামাস গোষ্ঠী, কী চায় তারা? ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সঙ্গে আছে কে কে?
শনিবারের হামলার পর গাজা ভূখণ্ডে উচ্ছ্বাস হামাস যোদ্ধাদের Image Credit source: AFP

| Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Oct 08, 2023 | 9:21 PM

গাজা ভূখণ্ড: শনিবার সকাল থেকে ইজরায়েলে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে হামাস। গাজা ভূখণ্ড থেকে ইজরায়েলি দখল থাকা এলাকা লক্ষ্য করে অন্তত ৫০০০ রকেট ছুড়েছে তারা বলে অভিযোগ করেছে ইজরায়েল। স্থলপথে, জলপথে, আকাশপথে সমান্তরাল হামলা চালিয়েছে তারা। ইজরায়েলের সীমানা লঙ্ঘন করে, প্রায় ২৪ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসে তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। ইজরায়েলের শয়ে শয়ে মানুষকে হত্যা করেছে। শতাধিক মানুষকে যুদ্ধবন্দি করে তুলে নিয়ে গিয়েছে তারা। প্রতিশোধ নিতে, গাজায় হামাস শিবিরগুলি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও। রবিবার ইজরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইজরায়েল-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ বেশ কয়েকটি দেশ হামাস বাহিনীকে জঙ্গি গোষ্ঠী বলে মনে করলেও, গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের কাছএ কিন্তু হামাস তাদের মুক্তিদাতা। কারা এই হামাস? তারা কি জঙ্গি না স্বাধীনতা সংগ্রামী? কেন ইজরায়েলে এই রকম ভয়ঙ্কর হামলা চালাল তারা? ফের একবার ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধের আবহে জেনে নেওয়া যাক এই গোষ্ঠী সম্পর্কে সবকিছু।

কারা এই হামাস গোষ্ঠী?

হামাস একটি প্যালেস্টাইনি যোদ্ধা গোষ্ঠী। ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে রয়েছে। ১৯৮৭ সালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে যে প্যালেস্টাইনি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলন থেকেই জন্ম নিয়েছিল হামাস গোষ্ঠী। হামাস কথাটি আরবি বাক্যবন্ধ ‘হরকত আল-মুকাওয়ামাহ আল-ইসলামিয়া’র সংক্ষিপ্ত অংশ। এই আরবি বাক্যবন্ধের বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন। ১৯৮৭ সালে আহমেদ ইয়াসিন এবং আবদেল আজিজ আল-রান্টিসি, মিশরীয় সংগছন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর শাখা হিসেবে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ২০০৭-এ, ৩৮ বছর পর গাজা ভূখণ্ড থেকে মিশরের দখলদারি উঠে যাওয়ার পর, সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল হামাস। তারা সরকার গঠন করলেও, হিংসার পথ ছাড়বে না বলে জানিয়েছিল। ইজরায়েল রাষ্ট্রকেও স্বীকৃতি দেয়নি তারা।

হামাসের আদর্শ কী?

১৯৮৮ সালে, হামাসের সনদ তৈরি করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল, এই গোষ্ঠীর প্রধান লক্ষ্য হল প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা এবং ইসরায়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজা ভূখণ্ডের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্য ইজরায়েল রাষ্ট্রের ধ্বংস চায় হামাস। পরে তারা অবশ্য ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবও দিয়েছিল। শর্ত ছিল, ইজরায়েলকে দখলদারি ছেড়ে ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধের আগের অবস্থানে পিছু হটতে হবে, প্যালেস্টাইনি নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং প্যালেস্টাইনি উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। এমনকি, মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ করে দেবে বলেও জানিয়েছিল তারা। ইজরায়েল অবশ্য কোনওদিনই হামাসের দাবি মানেনি। তারা বারবারই বলেছে, এই সকল ভাল ভাল কথা বলে গোটা বিশ্বকে বোকা বানাতে চাইছে হামাস গোষ্ঠী।

হামাস বনাম ফাতাহ

প্রবাদ প্রতীম প্যালেস্টাইনি নেতা ইয়াসের আরাফতের প্রতিষ্ঠিত ফাতাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রথম থেকেই সরাসরি বিরোধ রয়েছে হামাসের। দুই গোষ্ঠীই প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা চায়। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে একটি আধাসামরিক সংগঠন হিসেবে ফাতাহ গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরাফত। পরে অবশ্য সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ ছেড়ে দিয়েছিল গোষ্ঠীটি। ইজরায়েলের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুসারে একটি সমান্তরাল প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা সমর্থন করেছিল ফাতাহ। ২০০৪ সালে আরাফতের মৃত্যুর ফলে, প্যালেস্টাইনি রাজনীতিতে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। আর তারই সুযোগে শক্তি বাড়িয়েছিল হামাস। ২০০৭ সালে, ফাতাহ-র সঙ্গে গৃহযুদ্ধের পর হামাস গোষ্ঠী গাজা ভূখণ্ডের দখল নিয়েছিল। তারপর থেকে, গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হামাসের দখলে, আর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের ক্ষমতা ধরে রেখেছে ফাতাহ। দুই গোষ্ঠীর আরও কিছু পার্থক্য রয়েছে। হামাস খোলাখুলি নিজেদের ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচয় দেয়। ফাতাহ কিন্তু, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে। হামাস ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের আহ্বান জানায়। অন্যদিকে ফাতাহ, ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজায় আগ্রহী। বর্তমানে ফাতাহ গোষ্ঠীর প্রধান মাহমুদ আব্বাসই প্যআলেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট।

হামাসের পক্ষে কারা, কারা বিপক্ষে?

হামাস গোষ্ঠীকে সমর্থন করে ইরান, সিরিয়া এবং ইয়েমেন। ইরান, সিরিয়া এবং লেবাননের ইসলামী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও বিভিন্ন ক্ষেত্রে হামাসকে সমর্থন করে। শনিবারের হামলার পরও, হামাস গোষ্ঠীর পক্ষেই বিবৃতি দিয়েছে ইরানের বিদেশ মন্ত্রক। এই হামলাকে দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতিরোধ বলে, জানিয়েছে তারা। প্যালেস্টাইনি এলাকাগুলিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও হামাসের বিপুল সমর্থক আছে। হামাসের প্রতি সহানুভূতি রয়েছে কাতারেরও। শনিবারের হামলার পর, এই পরিস্থিতির জন্য ইজরায়েলকেই দায়ী করেছে কাতার। আরব লিগ এবং জর্ডনও বর্তমান সংঘাতের জন্য ইজরায়েলের নীতিকেই দায়ী করেছে। মরক্কো এবং সৌদি আরবও, ইজরায়েলকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, কানাডা, মিশর এবং জাপান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে গন্য করে।

হামাস কী চায়?

এক বিবৃতিতে, হামাসের সামরিক কমান্ডার মহম্মদ দেইফ জানিয়েছেন, আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করতেই ইজরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা শুরু করা হয়েছে। মুসলিমদের অন্যতম পবিত্র মসজিদ এই আল আকসা। কিছু দিন আগেই এই মসজিদে হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলি দখলদাররা। বস্তুত, বরাবরই প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছে এই আল আকসা মসজিদ। ইজরায়েলিদের দাবি, ইহুদিদের পবিত্র মন্দির ধ্বংস করেই এই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল। শনিবারের হামলার পর, হামাস কমান্ডার দেইফ জানিয়েছেন, জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করেছে ইজরায়লি দখলদাররা। তারই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।