লন্ডন: গর্ভাবস্থায় ‘মর্নিং সিকনেস’ অর্থাৎ বমিভাব বা বমি হওয়া, অসুস্থ লাগা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু, তাই বলে দাঁত পড়ে যাওয়া? বার্কশায়ারের বাসিন্দা লুইস কুপারের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে। ২৬ বছরের এই ব্রিটিশ মহিলার বর্তমানে একজন হেয়ারড্রেসার। তবে, ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্সের একটি স্কি রিসর্টে কাজ করতেন। সেই বছরই তিনি প্রথম গর্ভবতী হয়েছিলেন। আর গর্ভাবস্থার ১৬ মাসের মাথায় তাঁর প্রথম দাঁত পড়েছিল। আসলে, অত্যাধিক বমির কারণে তার সমস্ত দাঁত ক্ষয়ে গিয়েছিল। তিন সন্তানের মা এখন একেবারে ফোকলা। আর এই ফোকলা মুখের হাসিকেই এখন তিনি মেনে নিয়েছেন। জীবনকে চুটিয়ে উপভোগ করছেন।
লুইস কুপার জানিয়েছেন, প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ফলে ফ্রান্স থেকে তাঁকে ব্রিটেনে ফিরে আসতে হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি ‘হাইপারেমেসিস গ্র্যাভিডারাম’ বা এইচজি (HG) রোগে আক্রান্ত। এটা ‘মর্নিং সিকনেস’-এরই একটি বিরল এবং চরম রূপ। মার্কিন প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যাদের এইচজি থাকে, তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা এক দুর্বিষহ সময়। মারাত্মক বমি ভাব থাকে। প্রচণ্ড পরিমাণে বমি হয়। ওজন কমে যায়। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব দেখা দেয়। বছরে প্রায় ৬০,০০০ মার্কিন মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন হন।
লুইসের ক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল তাঁর দাঁতের উপর। গর্ভাবস্থার ১৬ সপ্তাহের মাথায় আচমকা একটি দাঁত পড়ে যাওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা জানান, বমিতে যে অম্ল বা অ্যাসিড থাকে, তা থেকে তাঁর দাঁতগুলি ব্যাপকভাবে ক্ষয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রথম সন্তানের জন্ম দেন লুইস। তারপর তাঁর আরও দুই সন্তান হয়েছে। প্রত্যেকবারই হাইপারেমেসিস গ্র্যাভিডারামে আক্রান্ত হয়েছেন লুইস। প্রসবের পরই অবশ্য সব সমস্যা দূর হয়ে যায়। তিন সন্তানের মায়ের চোয়ালে এখন আর একটিও দাঁত অবশিষ্ট নেই।
লুইস জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি খুব ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি, কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তাঁর রোগের লক্ষণের তুলনা করেছেন। জানিয়েছেন মানসিক এবং শারীরিকভাবে তাঁকে নিংড়ে নিয়েছে এই রোগ। দাঁত খোয়ানোর পাশাপাশি খাবারের ক্ষেত্রেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল মনে। যে যে খাবার খেলে বমি পেত, তা প্রসবের পরও খেতে পারতেন না তিনি। তবে, গত এক বছরে তিনি বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। ধীরে ধীরে তাঁর খাদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক হচ্ছে। আর, নকল দাঁত থাকা সত্ত্বেও তিনি এখন ফোকলা দাঁতেই বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন। দন্তহীন জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করেছেন। তাঁর মতো যেন কোনও শত্রুরও না হয় বলে কামনা করেছেন লুইস। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে কোনও গর্ভবতীরই এই অবস্থা হতে পারে।