কিয়েভ: পুতুল পুতুল একটা মেয়ে। গোলাপি রঙা জ্যাকেট। আলুথালু চুলে মুখটা ঢেকে গিয়েছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে। চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে জল, কথা বলতে গিয়ে ফুঁপোচ্ছে, আর সাদা পেজা তুলোর মতো গালদুটো রাঙিয়ে উঠেছে। বয়স বড়জোড় সাত কী আট! বাচ্চা মেয়েটা বাবার চোখে চোখ রাখতে পারছে না। অদ্ভূত অজানা আতঙ্ক দানা বেঁধেছে বুকে। আর বাবা যেন বুকে জাপটে ধরেই নিয়ে নিতে চাইছেন মেয়েক সব দুঃখকে নিজের পাজরে ভরে! ‘বাবা কবে আসবে গো…’ নাহ, প্রশ্ন করতে পারেনি মেয়েটা। আর কাঁদতে কাঁদতে ফুলে যাওয়া বাবার চোখের পরিভাষায় সেই উত্তরও মেলেনি। ইউক্রেনের কিয়েভের একটা বাসের সামনে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য আজ বড় বুকের ভিতরটা চিরচিরে ধরাচ্ছে।
ইউক্রেনের বাতাসে বারুদের ঝাঁঝালো গন্ধ। বিচ্ছেদ, নৃশংসতার ছবি সর্বত্র। কিন্তু এই বিচ্ছেদ বাবার সঙ্গে তার মেয়ের। ভিডিয়ো ওই বাবা-মেয়ের পাশেই দাঁড়িয়ে এক ভদ্রমহিলাকে দেখা যাচ্ছে। তিনি সান্ত্বনা দিচ্ছেন দুজনকেই। সম্ভবত ওই বাচ্চা মেয়েটির মা। বাবা আর মেয়ের মধ্যে কাকে সামলাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের বাতাবরণে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার এই ভিডিয়োটা ছেয়ে গিয়েছে নেট দুনিয়ায়।
বাবা যাচ্ছেন যুদ্ধে আর মেয়েটা তার ‘ড্যাডিকে’ এগিয়ে দিতে এসেছে। যুদ্ধ কবে শেষ কবে, ফের কবে দেখা হবে- এই উত্তর জানে না ওদের কেউই। ছোট্ট মেয়েটা হয়তো যুদ্ধের আক্ষরিক অর্থই বোঝে না, কিন্তু বাবা তো জানেন বিপদটা! হয়তো এ জন্মে দেশকে বাঁচাতে রাঙিয়ে দিতে হবে মাটি! যুদ্ধে যাওয়ার আগে ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে বাবার আলিঙ্গন আজ নেটাগরিকদের চোখের পাতা ভেজাচ্ছে। মেয়ে আর স্ত্রীকে গাড়িতে তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন অন্যত্র। আর নিজে যাচ্ছেন যুদ্ধে।
Heartbreaking: A father in Ukraine says goodbye to his kids as he sends them to safety. He is staying behind to fight for his country.pic.twitter.com/GoN69DCF0w
— Bhavisha Patel (@BhavishaPatel) February 24, 2022
ইউক্রেনের কিয়েভে কোনও এক নাগরিকের মোবাইলে তোলা ছোট্ট ভিডিয়ো। শত সহস্র দূরের সেই দেশের বাবা-মেয়ের আলিঙ্গন বুকে মোচর দিচ্ছে নেটাগরিকদের। চোখের কোণটা চিকচিক করে উঠছে। বাবা হাঁটু গেরে বসে চেপে ধরেছেন মেয়ের ছোট্ট হাতটা। আর কপালে ঠেকিয়ে কেঁদেছেন অঝোরে…. না বলা চোখের ভাষা বলেছে, ‘ভালো থাকিস মা… দেখা হবে আবার’