কাবুল: আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেও স্বস্তি নেই তালিবানের (Taliban)। কারণ দেশ শাসনের জন্য চাই বিপুল পরিমাণ অর্থ, এদিকে হাত খালি তালিবানের। এই পরিস্থিতিতে অর্থ সাহায্য জোগাড়ে যখন হিমশিম খাচ্ছে নতুন তালিব সরকার, তখনই রাষ্ট্রপুঞ্জ (United Nation) সতর্ক করে জানাল, দ্রুত টাকা জোগাড় করতে না পারলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বে আফগানিস্তান (Afghanistan)।
যে কোনও দেশ পরিচালনের জন্যই প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থের। তবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মোট খরচের একটি বড় অংশই আসত বিদেশি সাহায্য থেকে। তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তালিবান আফগানিস্তান দখল নেওয়ার পরই সেই অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় সমস্ত দেশই।
তালিবান বাহিনী আফগানিস্তান দখলের পরই আমেরিকা ও সঙ্গী সাতটি দেশ মিলিতভাবে আফগানিস্তানের অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আফগানিস্তান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ পড়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশে। ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের তরফে আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডারে তালিবান যাতে হাত লাগাতে না পারে, তার জন্য অ্যাকউন্টের গতিবিধি বন্ধ করে দিয়েছে। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ দ্বারাই এতদিন আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডার নিয়ন্ত্রিত হত। আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের তরফেও ৪ কোটি ৪০ লক্ষ ডলারের তহবিলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তালিবানি অপব্যবহার রুখতে।
এ দিকে, বৃহস্পতিবারই রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে সতর্ক করে বলা হয়, তালিবানের হাত থেকে রক্ষা করতে আফগানিস্তানের কয়েকশো কোটির যে আর্থিক ভাণ্ডার আটকে দেওয়া হয়েছে, তার জেরে দেশের অর্থনীতিতে অকল্পনীয় ক্ষতি হতে পারে। লক্ষাধিক আফগানবাসী অর্থসঙ্কট ও অনাহারের মুখে পড়তে পারেন।
রাষ্ট্রপুঞ্জের স্পেশাল এনভয় ডেবোরা লায়ন্স জানান, আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়া থেকে রুখতে দ্রুত অর্থ সাহায্যের ব্য়বস্থা করতে হবে। তবে একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে তালিবানরা যেন এই অর্থ সাহায্যের অপব্যবহার করতে না পারে।
১৫ সদস্যের কাউন্সিলের বৈঠকে লায়ন্স বলেন, “তালিবান ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতিকে দম নেওয়ার জন্য আরও কয়েক মাস সুযোগটুকু দিতে হবে। এই সময়ের মধ্য়ে তালিবানদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা কতটা আলাদাভাবে দেশ শাসন করতে চায় এবং পরিবর্তনেই বা কতটা স্বচ্ছন্দ্য তারা। মানবাধিকার সুরক্ষিত করতে এবং লিঙ্গভিত্তিক বিভেদ ও সন্ত্রাসবাদ ঘোচাতে কতটা সক্রিয় তালিবান, তাও প্রমাণ করতে হবে।”
মার্কিন কূটনীতিবিদ জেফারি ডেলরেন্টিস নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, “তালিবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সাহায্য চাইছে। আমাদের স্পষ্ট কথা হল, কোনও সাহায্য় বা স্বীকৃতি এমনিই দেওয়া হয় না, তা অর্জন করে নিতে হয়। তালিবানকেও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে যে কোনও সাহায্যের জন্যই।”
তবে রাশিয়া ও চিনের তরফে আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডার আটক করে রাখার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। চিনের প্রতিনিধি গেঙ শুয়াং বলেন, “এই সমস্ত অর্থসম্পত্তি আফগানিস্তানের এবং তা আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্যই ব্যবহার করা উচিত। সেই অর্থ আটকে রেখে ভয় দেখানোর কোনও অর্থ নেই।”
উল্লেখ্য, বুধবারই আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে ২০ কোটি ইয়ানের (৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার) সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেজিং। এর মধ্যে রয়েছে, শস্য, শীতকালীন সামগ্রী, টিকা, ওষুধ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। নতুন তালিবান সরকারে প্রাথমিক সাহায্য হিসেবে কাবুলে করোনা টিকার ৩০ লাখ ডোজ়ও পাঠাবে চিন।