
ইউরোপের উপর কুনজর পড়েছে রাশিয়ার। ইউক্রেনকে দিয়ে শুরু, এরপর ইউরোপের মূল ভূখণ্ডেও আক্রমণ করে বসতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই আশঙ্কায় এবার ব্রিটেনকে পরমাণু বোমা পাঠালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন বিমানে করে ইউরোপে নামল আমেরিকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পারমাণবিক বোমা ‘বি সিক্স ওয়ান-১২’ থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা। ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইউরোপের মাটিতে এত ভয়ঙ্কর বোমা আগে কখনও পাঠায়নি ওয়াশিংটন। এই বোমা ৫০ কিলোটন পর্যন্ত বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। পুরনো ‘বি সিক্স ওয়ান’ মডেলের চেয়ে নতুন বোমাটি আরও ভয়ঙ্কর ও নিখুঁত লক্ষ্যে হামলা চালাতে সক্ষম।
গত ১৬ জুলাই সি-১৭ বিমানে চাপিয়ে ব্রিটেনে পাঠানো হল মার্কিন পরমাণু বোমা। নিউ মেক্সিকোর কাছে আলবাকার্কে অবস্থিত কির্টল্যান্ড বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে মার্কিন বিমান উড়ে যায় ব্রিটেনের লাকেনহেথ শহরের ব্রিটিশ সেনাঘাঁটিতে। ওপেন সোর্স ডেটা মোতাবেক, গোটা রাস্তাতেই সি-১৭-এর ‘ট্রান্সপন্ডার’ চালু রাখা হয়েছিল। মানে, বিমানটি কোথা থেকে উড়ছে, কোথায় যাচ্ছে, মাঝে কোথাধরেই ও থামল কি না — পুরোটাই ট্র্যাক করতে পেরেছেন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, সম্ভবত গোটা দুনিয়াকে, বিশেষত রাশিয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখিয়ে দিতে চাইলেন, ১৭ বছর পর তিনি ফের ব্রিটেনকে পরমাণু বোমা পাঠালেন। ২০০৮-এর পর আবার ২০২৫-এ।
প্যাসিফিক ফোরামের ইউরোপ কেন্দ্রিক বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম আলবার্ক জানিয়েছেন, পরমাণু বোমাটি বহন করে ইউরোপে পৌঁছে দিয়েছে মার্কিন বায়ুসেনার প্রাইম নিউক্লিয়ার এয়ারলিফট ফোর্স। সাধারণত সি-১৭ বিমান-ই মার্কিন পরমাণু বোমা বহন করে ও অন্য কোনও দেশের বায়ুসীমায় প্রবেশ করে না। ফলে এই বিশেষ বিমানের ওঠানামা থেকেই স্পষ্ট, মার্কিন মুলুক থেকে পরমাণু বোমা নিয়ে ইউরোপীয়ান মাটিতে পৌঁছে গেছে সি-১৭। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকা বা ব্রিটেন- কেউ-ই এখনও পর্যন্ত পরমাণু বোমা প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা পেন্টাগনের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, গত বেশ কয়েকবছর ধরেই ব্রিটেনের লাকেনহেথ শহরে ‘সিকিওর ফেসিলিটি’-র নাম করে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সেখানে ঠিক কী কাজে এত টাকা লাগছে, সেটার উল্লেখ নেই বাজেটে।
এখনও পর্যন্ত ন্যাটো-র তরফে আমেরিকার এই পদক্ষেপ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু মার্কিন বিমানের ট্রান্সপন্ডার চালু রেখে উড়ে যাওয়া দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেনেবুঝেই করেছেন। রাশিয়াকে তিনি বুঝিয়ে দিতে চান, ইউরোপে মার্কিন পরমাণু বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এটাই ট্রাম্পের প্রথম পদক্ষেপ নয়। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে আরও মার্কিন প্যাট্রিয়ট মিসাইল পাঠানোয় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন ট্রাম্প। ৫০ দিনের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি না হলে বাড়তি শুল্ক চাপানোরও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন।
পাশাপাশি শক্তি বাড়াচ্ছে ইউরোপও। ব্রিটেন জানিয়েছে, অন্তত এক ডজন মার্কিন এফ-৩৫ এ যুদ্ধবিমান কিনতে চলেছে তারা। এই বিমানগুলি ‘বি সিক্স ওয়ান-১২’ পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম। আর এবার মার্কিন সাহায্য পাওয়া মানে, এখন ইউরোপ জুড়ে ছটি ন্যাটো দেশের সাতটি সেনাঘাঁটিতেই পরমাণু বোমা মজুত রয়েছে। একসঙ্গে ইউরোপের মাটিতে এতগুলো ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন আজ পর্যন্ত কখনও মজুত করেনি আমেরিকা। তবে মার্কিন বোমা ব্যবহার করতে হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুমতি বাধ্যতামূলক।