
আলাস্কায় বহু প্রতীক্ষিত ডোনাল্ড ট্রাম্প–ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠক ঘিরে শুরু হয়েছে চর্চা। শুক্রবারের ওই বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও চুক্তি হয়নি বলেই জানানো হয়েছে। তবে দুই দেশের প্রেসিডেন্টই একে অপরের প্রশংসা করেন এবং ব্যর্থতার কোনও ইঙ্গিত দেননি। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে জোর গুঞ্জন, আড়ালে কোনও ‘সিক্রেট ডিল’ হয়েছে কি? এদিকে, এই বৈঠকে একটি চমকপ্রদ দৃশ্য নজর কাড়ে। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে দেখা যায় ‘UCCR’ লেখা কালো টি-শার্ট পরে বৈঠকে প্রবেশ করতে। UCCR বলতে ইউক্রেনিয়ান সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক, যা অতীতে ইউক্রেন-সোভিয়েত বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই প্রতীকী বার্তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বৈঠকের পর থেকেই রাশিয়ায় ওই ধরনের টি-শার্ট কিনতে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।
বৈঠক ঘিরে আলোচনার মধ্যে উঠে এসেছে ইউক্রেন প্রসঙ্গ। সূত্রের খবর, ইউক্রেনকে সরাসরি বৈঠকে রাখা হয়নি। তবে, সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে ডেকেছেন ট্রাম্প। কী আলোচনা হয়েছে সেটা বলতে নয়। ট্রাম্প কী চাইছেন, সেটাই স্পষ্ট করে জেলেনস্কিকে বলে দেবেন। ট্রাম্প চাইছেন, পুতিনের সব শর্তের অন্তত ৭০ শতাংশ মানতে হবে জেলেনস্কিকে। সেটা হলেই সংঘাত বন্ধ করার কৃতিত্ব ট্রাম্পের ঝুলিতে চলে আসবে। আমেরিকায় ট্রাম্প বিরোধী কূটনৈতিক মহল বলছে, এটাই ‘আলাস্কার সিক্রেট ডিল’। জেলেনস্কিকে সেটা জানতে দিতে চাননি ট্রাম্প ও পুতিন। এই কারণেই তাকে বৈঠকে রাখা হয়নি। সোমবার, জেলেনস্কি ট্রাম্পের প্রস্তাবে কীভাবে রি-অ্যাক্ট করেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। জেলেনস্কি ট্রাম্পের কথায় সায় দিলে রাশিয়া- ইউক্রেন- আমেরিকা – ত্রি-পাক্ষিক বৈঠক হবে। নয়তো যেমন চলছে, তেমনই চলবে।
উল্লেখ্য, এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্যও কিছু ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছে বৈকি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আপাতত রাশিয়ার বাণিজ্যিক সহযোগীদের উপর বাড়তি শুল্ক বসানো হবে না। তবে আগামী ২–৩ সপ্তাহে ইতিবাচক অগ্রগতি না হলে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হবে। অর্থাৎ ভারতের উপর এখন ২৫ শতাংশ শুল্ক বজায় থাকছে, যা ভবিষ্যতে ৫০ শতাংশেও পৌঁছাতে পারে। ভারতীয় বাণিজ্যিক মহল ইতিমধ্যেই বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছে। একটি তেলবাহী জাহাজ দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশে যাওয়ার পথে হঠাৎ রুট পরিবর্তন করে চিনে প্রবেশ করে। গুজরাতের নায়রা এনার্জি রাশিয়া থেকে তেল কিনে পরিশোধন করে সেই তেল চিনে পাঠিয়েছে বলে দাবি করেছে কেপলার নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতের এই কৌশল আন্তর্জাতিক মহলকে অবাক করেছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, আগামী ২০ আগস্ট রাশিয়া সফরে ভারত ফের ডিসকাউন্টে তেল কেনার প্রস্তাব দেবে। রাশিয়া রাজি হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি দীর্ঘমেয়াদি তেল চুক্তি করতে পারে। ফলে বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেন সংঘাতের আড়ালে মূল লড়াই বাণিজ্যিক ও জ্বালানি স্বার্থকে ঘিরেই।