TV9 Explained: জি-২০ কী? এর সভাপতিত্ব করে ভারতের লাভ কী?

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Nov 09, 2022 | 4:15 PM

India's G-20 presidency Explained: মঙ্গলবার ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইটের উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কী এই জি-২০ গোষ্ঠী? এর সভাপতিত্বের দায়িত্ব নিয়ে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জগুলিই বা কী কী? আর এতে আমাদের দেশের লাভই বা কী?

TV9 Explained: জি-২০ কী? এর সভাপতিত্ব করে ভারতের লাভ কী?
মঙ্গলবারই ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইটের উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

Follow Us

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার এক ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইটের উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানিয়েছেন, এই লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইট বিশ্বের কাছে ভারতের অগ্রাধিকারগুলি তুলে ধরবে। চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করবে। এই সময়কালে সারা দেশে এই ফোরামের ২০০টি সভার আয়োজন করা হবে। প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে অন্তত একটি করে সভা হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কী এই জি-২০ গোষ্ঠী? এর সভাপতিত্বের দায়িত্ব নিয়ে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জগুলিই বা কী কী? আর এতে ভারতের লাভই বা কী?

জি-২০ কী?

জি-২০, বা ‘গ্রুপ অফ টোয়েন্টি’ হল, বিশ্বের প্রধান প্রধান উন্নত এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলির ফোরাম। এই গোষ্ঠীর সদস্য হল – ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ফোরামটি বৈশ্বিক অর্থনীতির পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি প্রশমন এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের মতো বিভিন্ন বৈশ্বিক বিষয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম।

কেন জি-২০ গোষ্ঠী শক্তিশালী?

জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলি বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রক। বৈশ্বিক বাণিজ্যেরও ৭৫ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে এই গোষ্ঠীর সদস্যরা। পাশাপাশি, মানব সম্পদেও ভরপুর এই গোষ্ঠী। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এই গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলির বাসিন্দা।

জি-২০ গোষ্ঠীর ইতিহাস

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়েছিল গ্রুপ অব টুয়েন্টি বা জি-২০। এটি মূলত বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরদের একটি সভা ছিল। সভার লক্ষ্য ছিল, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আর্থিক সঙ্কট সমাধানের জন্য কার্যকরী নীতিমালা রচনা। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ভারত জি-২০ গোষ্ঠীর সদস্য। বর্তমানে এই ফোরামের শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিটি সদস্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্তারা অংশ নিয়ে থকেন। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বেসরকারি সংগঠনকেও এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ

ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জগুলি বড় সহজ নয়। গত কয়েক মাসে, জি-২০ গোষ্ঠীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভ্যন্তরীণ ফাটল ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভারত সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এই বিভেদ দূর করতে হবে। ভিন্নমতের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ করতে হবে। ভারতকে এমন কিছু নীতি তৈরি করতে হবে, যেগুলির বিষয়ে সকল সদস্য দেশ ঐক্যমত হতে পারে। জলবায়ু ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে হবে ভারতকে। মাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে উন্নত দেশগুলিকে। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। আইএমএফ, ডব্লিউটিও-র মতো অর্থনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামগুলির সঙ্গে যৌথভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে ভারতকে। এছাড়া, অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে একটি জি-২০-র নীতি নির্ধারণের মতো চ্যালেঞ্জ।

ভারতের প্রস্তুতি

ইতিমধ্যেই সরকার জানিয়েছে, ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের অগ্রাধিকারগুলি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল বৃদ্ধি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তি-সক্ষম উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়ন, বৈশ্বিক খাদ্য এবং শক্তি সুরক্ষা। ২০২৩ সালের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।

ভারতের প্রাপ্তি

জি-২০ প্রেসিডেন্সি ভারতকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে অবদান রাখার জন্য এক অনন্য সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এই সুযোগ ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা প্রধানমন্ত্রীর ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’তে পরিণত করার আহ্বান সফল করার দিকে এগিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এই ফোরামের সভাপতিত্ব বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নততর করারও দারুণ সুযোগ। ভবিষ্যতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন পেতে সুবিধা হবে ভারতের।

Next Article