
টেনিস কোর্ট বহুদিন আগে ছাড়লেও রজার ফেডেরারের অগণিত ভক্ত এখনও গোটা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে। পাওয়ার টেনিসের যুগে বেসলাইনের লড়াই ভেঙে সার্ভ-অ্যান্ড-ভলির রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনিই। ঘাসের কোর্টের রাজা, এক চলমান রূপকথা। এবার সেই ফেডেরারকেই দেখা যাবে এক অন্য ভূমিকায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বসে ট্যারিফ নিয়ে দরাদরি করবেন তিনি। শুধু ফেডেরার নন, সঙ্গে থাকবেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো অবাক লাগছে, তাহলে বিষয়ট্ খোলসা করা যাক।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ঘিরেই তৈরি হয়েছে এই অদ্ভুত পরিস্থিতি। আমেরিকায় ব্যবসা করছে সুইস ফার্মা জায়ান্ট Roche এবং Novartis। ট্রাম্প সুইস সরকারকে বলেছিলেন, ওষুধের দাম কমাতে কোম্পানিগুলোকে চাপ দিতে। কিন্তু সুইস সরকার কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। ফলে রেগে গিয়ে আমেরিকায় সুইস পণ্যের ওপর ৩৯ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসিয়ে দেন ট্রাম্প। ফলস্বরুপ আমেরিকার বাজারে ধাক্কা খেতে বসেছে সুইস ঘড়ি, চকোলেট, চিজ, ওয়াইন, সবকিছুই। শুল্ক কমাতে ফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছিলেন সুইস প্রেসিডেন্ট Karin Keller-Sutter। কিন্তু উল্টে ফোনে দুজনের ঝগড়া বেঁধে যায়।
এরপরই কূটনৈতিক দাওয়াই হিসেবে এক অভিনব পদক্ষেপ বেছে নিল সুইস সরকার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন গলাতে টেনিস লিজেন্ড রজার ফেডেরার ও ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনোকে হোয়াইট হাউসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুইস প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকদের কাছেও তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে আরও এক কূটনৈতিক চাপের খেলা। ২০২৬ সালে আমেরিকায় বসবে ফুটবল বিশ্বকাপ। আয়োজক দেশ হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের কাছে ফিফার সমর্থন ধরে রাখা জরুরি। ফলে ইনফান্তিনোকে ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হচ্ছে। আর ফেডেরার, যিনি নিজেই সুইস কূটনীতির সফট পাওয়ার, টেনিস কোর্ট নয়, এবার ওভাল অফিসে বসেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে হাজির হবেন দু’জন।
তবে এতে কাজ আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কারণ কয়েকদিন আগেই শুল্ক ইস্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তাঁর দেশের দুই বিখ্যাত গলফার Ernie Els ও Retief Goosen-কে ট্রাম্পের কাছে পাঠিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, গলফপ্রেমী ট্রাম্প হয়তো নরম হবেন। হয়নি। উল্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপরও বসেছে ৩০ শতাংশ শুল্ক। সুতরাং ফেডেরার ও ইনফান্তিনোকে পাঠানোর এই কূটনৈতিক চাল কতটা কাজে দেবে, সেটা সময়ই বলবে।