
লন্ডন: দুই মাস আগেই অল্পের জন্য ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষপদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন ঋষি সুনাক। কিন্তু, গত কয়েকদিনে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। লিজ় ট্রাসের ইস্তফার পর, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঋষি সুনক। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী সুনক এক সময়ে গোল্ডম্যান শ্যাক্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। বরিস জনসন মন্ত্রিসভায়, যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ব্রিটেনের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্যতিনি যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। আসুন চিনে নেওয়া যাক, কে এই ঋষি সুনক। কীভাবেই বা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন হলেন তিনি?
১৯৮০ সালের ১২ মে সাউদাম্পটনের এক অভিবাসী পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। তাঁর বাবা যশবীর এবং মা ঊষা দুজনেই ছিলেন ফার্মাসিস্ট। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল তাঁদের পরিবার। তবে, তাদের শিকড়ের সন্ধান পাওয়া যায় পঞ্জাবে। সুনকদের পৈত্রিক ভিটে ছিল গুজরানওয়ালায়। যা এখন পাক পঞ্জবের অন্তর্গত। তবে, ১৯৩০-এর দশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে, তাঁরা পূর্ব আফ্রিকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ঋষি সুনকের বাবা যশবীর এবং মা ঊষা
উইনচেস্টার কলেজ থেকে তাঁর স্কুলশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সুনক। ইংল্যান্ডের এই বেসরকারী স্কুল, তাদের দেশকে একের পর এক চ্যান্সেলর দেওয়ার জন্য সুপরিচিত। মজার বিষয় হল, হাত খরচা জোগারের জন্য গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি সাউদাম্পটনের এক ভারতীয় রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবেও কাজ করতেন। এরপর তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০০১-এ সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর, ‘গোল্ডম্যান শ্যাক্স’ সংস্থায় একজন আর্থিক বিশ্লেষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ পর্যন্ত তিনি এই বিনিয়োগ ব্যাঙ্কিং সংস্থায় কাজ করেছিলেন।
এরপর, তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন আমেরিকায়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়তে গিয়েছিলেন। এখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির। তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের এন আর নারায়ণ মূর্তির কন্যা হলেন অক্ষতা মূর্তি। ২০০৯ সালে অক্ষতা ও ঋষির বিবাহ হয়। এই দম্পতির দুই মেয়ে আছে – অনুষ্কা এবং কৃষ্ণা।
ঋষি সুনক ও অক্ষতা মূর্তি
২০১৫ সালে প্রথম রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন সুনক। ওই বছর ইয়র্কসের রিচমন্ড আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে একই কেন্দ্র থেকে পুননির্বাচিত হয়েছিলেন সুনক। থেরেসা মে-র মন্ত্রিসভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন একজন জুনিয়র মন্ত্রী হিসেবে। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, সুনককে ব্রিটিশ কোষাগারের প্রধান সচিব করেছিলেন। ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে কোভিড মহামারি চলাকালীন তাঁর পদোন্নতি হয়। তাঁকে ব্রিটিশ চ্যান্সেলর অর্থাৎ অর্থমন্ত্রীর পদে নিয়োগ করেন জনসন। অর্থাৎ, ২০১৫ থেকে ২০২২ – মাত্র ৭ বছরেই উল্কার গতিতে একজন সাধারণ সংসদ সদস্য থেকে শীর্ষপদে উত্থান ঘটল ঋষি সুনকের।
তিনি কখনই প্রকাশ্যে তাঁর সম্পত্তি জাহির করেননি। তবে রাজনীতিতে আসার আগে কর্মজীবনে তুমুল সাফল্যের জোরে কুড়ি বছরের কোঠাতেই তিনি কোটিপতি হয়ে উঠেছিলেন বলে শোনা যায়। আর বিয়ের পর যে তাঁর অর্থভাগ্যের দরজা আরও প্রসারিত হয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। চলতি বছরে সুনক এবং তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তাঁর স্ত্রী ইনফোসিস সংস্থা থেকে যে আয় করেন, তার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে কোনও কর দেন না বলে, তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ঋষি সুনক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ট্রাসের কাছে পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল এই সমালোচনা। সব মিলিয়ে তাঁকে ব্রিটেনের অন্যতম ধনী সাংসদ বলে মনে করা হয়।