
ঢাকা: ১৭ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন। সুদূর লন্ডন থেকে নানা বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু, দেশে ফেরেননি। আর আজ বাংলাদেশ যখন নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, তখন পদ্মাপারের দেশে ফিরছেন তিনি। ১৭ বছর পর আগামিকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের মাটিতে পা পড়বে তাঁর। তাঁর এই ফেরা নিয়ে উন্মাদনা ছড়িয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কিন্তু, কে এই তারেক রহমান? ১৭ বছর কেন তাঁকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকতে হয়েছে?
তারেক রহমান কে?
বাংলাদেশের সবচেয়ে চর্চিত দুটি রাজনৈতিক পরিবার হল শেখ পরিবার ও জিয়া পরিবার। আর জিয়া পরিবারের সদস্য হলেন তারেক রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর পরিবার অনেকটা জায়গাজুড়ে রয়েছে। তারেকের বাবা বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর মা হলেন বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন তারেকের বাবা জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তৃতীয় সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে আততায়ী হামলায় প্রাণ হারান জিয়াউর।
তারেকের মা খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। প্রথমবার ১৯৯১ সালের মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর কয়েক সপ্তাহ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর তৃতীয় দফায় ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া।
জিয়াউর আর খালেদার বড় পুত্র তারেক। তারঁ জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। অর্থাৎ মাস খানেক আগেই ৬০ বছর পূর্ণ করলেন। একসময় বিএনপি-র যুবরাজ বলা হত তাঁকে। বিএনপি-তে খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখা হত। ২০০০ সালের পর থেকে বিএনপি-তে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছিল তাঁর।
রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন-
বিএনপি নেতা-কর্মীরা যাঁকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতেন, সেই তারেক রহমানকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে লন্ডন চলে যেতে হল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে পালাবদল হয়। ক্ষমতা হারায় বিএনপি। আর আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সেইসময় বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে উঠেছিল। গ্রেফতার করা হয় তারেককে। ১৮ মাস জেলে কাটে তাঁর। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে হাসিনা সরকার তাঁকে জেল থেকে ছাড়ে। তারপরই পরিবার নিয়ে লন্ডন চলে যান তারেক। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সেখানেই গত ১৭ বছর রয়েছেন তিনি।
২০০৭ সালের পর থেকে তারেকের বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতি, আর্থিক তছরুপ, বেআইনি সম্পত্তি এবং গ্রেনেড হামলায় আদালতে দোষীসাব্যস্তও হন তারেক। বিএনপি-র অবশ্য দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে তারেকের বিরুদ্ধে।
ব্রিটেনে থাকলেও বিএনপি-র বিভিন্ন কার্যক্রমে সেখান থেকেই অংশ নিয়েছেন তারেক। খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বিএনপি-র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হন তিনি। গত বছর বাংলাদেশ ফের উত্তপ্ত হওয়ার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নান বার্তা দিতে দেখা যায় তাঁকে। তবে তাঁর বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। এই প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, এটা তাঁর নিয়ন্ত্রণে নেই।
অবশেষে গত ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে বিএনপি-র এক অনুষ্ঠানে তারেক ঘোষণা করেন, সাধারণ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে ফিরবেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পদ্মাপারের দেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। আর ২৫ ডিসেম্বর দেশে পা রাখতে চলেছেন তারেক। একসময় তাঁকে ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীরা যে স্বপ্ন দেখতেন, সেই স্বপ্ন কি এবার সফল করার লক্ষ্যে ঝাঁপাবেন তারেক? বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন তাঁর ভূমিকা কী হবে? এই সব জল্পনার মাঝেই পদ্মাপারের দেশে পা পড়তে চলেছে তাঁর।