ঢাকা: ২০০৪ সাল, তখন একেবার মাঝরাত। অন্ধকার চিরে বেরিয়ে চারিদিক ঘিরে ফেলল বাংলাদেশ পুলিশ। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ধারের জেটিঘাটে তখন গিজগিজ করছে পুলিশে। উদ্ধার হয়েছে ১০ ট্রাক ভর্তি চিনা অস্ত্র। পদ্মা নদীর পাড়ের দেশে পড়েছে জোর শোরগোল। নাম জড়াচ্ছে একের পর এক বিএনপি নেতার। নাম জড়াল খোদ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের। অবশেষে অস্ত্র পাচার মামলায় প্রকাশ্যে এল মাস্টারমাইন্ডের নাম। পরেশ বড়ুয়া।
কাট টু ২০২৪
বাংলাদেশে অচলাবস্থার মধ্য়ে দিয়ে তৈরি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার জায়গায় বসেছেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস। সেই ফাঁকেই এদিন সেই দু’দশক পুরনো মামলার রায় দিল বাংলাদেশের হাইকোর্ট। অস্ত্র পাচার কাণ্ডে আগেই ফাঁসির খাঁড়া মাথার উপর ঝুলেছিল এই পরেশ বড়ুয়ার। তবে আদালতের রায়ে মিলল স্বস্তি। ফাঁসির সাজা তুলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিল আদালত। আর তাতেই শঙ্কা বাড়ল ভারতের।
কে এই পরেশ বড়ুয়া?
অসমের একটি ছোট পরিবারে জন্ম তাঁর। তাঁর জন্ম সূত্রে যে ছিল বিপ্লব-প্রতিবাদের ধারা। অসমের মতক পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। এই মতকদের পূর্বসূরি আবার অহম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। ফলত সংগ্রাম যে পরেশ বড়ুয়ার রক্তধারায় বইছে তা সন্দেহাতীত।
পরবর্তীকালে, চাকরি ছেড়ে পরিবারের ধারা বজায় রেখে সংগ্রামের পথে নামে তিনি। তবে তাঁর কায়দাটা হয়ে যায় আরও সশস্ত্র ও চরমপন্থী। ১৯৮১ সালে উলফা বা যুক্ত লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম গঠনের দু’বছর পর পরেশও এই ভারতবিরোধী সংগঠনে নাম লেখায়। তৎকালীন পরিস্থিতিতে অসম চলা দুরাবস্থা, অর্থনৈতিক ধস, বেকারত্ব প্রতিটি সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটই পরেশের ভাবাবেগে আঘাত করে। যার জেরে অসাধ্য সাধনের পথে, দুর্নীতি-দুরাবস্থা থেকে অসমের স্বাধীনতা দাবিতে সরসরি রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন উলফায় নাম লেখান তিনি।
কী এই উলফা?
১৯৭৯ সালের ৭ই এপ্রিল, এক দল যুবকের নেতৃত্বে গঠন করা হয় ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম। সে রাজ্যের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে উলফা। রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা অহিংসার পথ ছেড়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকেই স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া আর্দশে এগোতে শুরু করে উলফা। ঝরে রক্ত, চলে আন্দোলন। গঠনের কয়েক বছরের মধ্যেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তকমা পেয়ে যায় উলফা। উত্তর-পূর্বে নিজেদের আস্ফালন তৈরিতে বিপুল অস্ত্রের সম্ভার তৈরি করে তারা। সেই সূত্রেই বাড়ে চিনের সঙ্গে যোগাযোগ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এক বান্ধবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রায়ই মায়ানমারের জঙ্গলে পেরিয়ে চিনে যেতেন তিনি। সেই বান্ধবী নাকি আবার ছদ্মবেশী চিনা গোয়েন্দা বলেই খবর।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের কাছে পরেশ বড়ুয়ার অপরাধী রূপে দর যত বেড়েছে। তত নিজের গা ঢাকা দিতে চিনের দিকে পা বাড়িয়েছে উলফার আলফা প্রধান। এমনকি ভারতের উত্তর-পূর্বে সন্ত্রাস চালাতে বরাবরই বাংলাদেশকে মাধ্যম করেছেন পরেশ। অবশেষে ২০০৪ সালের অস্ত্র পাচার নাম জড়ায় পরেশ বড়ুয়ার। গা ঢাকা দিতে বারংবার চিনে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। তবু মেলেনি স্বস্তি। বাংলাদেশ আদালত রায় দিয়েছিল পরেশের মৃত্যুদণ্ডের। সেই রায় বদলে গেল ইউনূস সরকারের আমলে। ফাঁসির সাজা মুকুব হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেলেন পরেশ বড়ুয়া।